হাটহাজারীতে ঐতিহ্যবাহী মন্দাকিনী স্নানে লাখো পূর্ণার্থীর ঢল
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক,হাটহাজারী ,চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহদাবাদ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মন্দাকিনী স্নানে লাখো পূর্ণার্থীদের মিলন মেলায় মহা সমারোহে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছর মধূ কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে স্নান অনুষ্ঠিত হয়। মন্দাকিনী স্নানকে কেন্দ্র করে জমে উঠে লোকজ মেলা।
বুধবার (৩০ মার্চ ২০২২ ) স্নান ও মেলা উপলক্ষে কমিটির পক্ষ থেকে দুই দিনের নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। এসব কর্মসূচীর মধ্যে ছিল ধর্মীয় সভা, কবিগান, গীতাপাঠ, কীর্ত্তন, স্নান, শিব পূজা ও মহাপ্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠান। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উপজাতিসহ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে লাখো পূর্ণার্থীর সমাগম ঘটে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মন্দাকিনী স্নান উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন মেলাস্থলে উপস্থিত হয়ে পূজা অর্চনা শুরু করে। সূর্য উদয়ের পর তিথি শুরু হলে পূর্ণার্থীরা মন্দাকিনী খালে স্নান সেরে প্রয়াত পিতা মাতা, আত্মীয় স্বজনের উদ্যেশে মন্ত্র পাঠ করে পিন্ড দান করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলাস্থলে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। মেলায় যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
সীতাকুন্ডের পাহাড়ি জলধারা থেকে মন্দাকিনী খাল উৎপত্তি হয়ে পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে ফরহাদাবাদ মন্দাকিনী গ্রাম হয়ে হালদা নদীর সাথে মিশেছে। মন্দাকিনী খালটি এক স্রোতী। সারা বছর এ খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। হালদা নদীর সংযোগস্থলে অমাবস্যা পূর্ণিমা তিথিতে নদীর জোয়ার বৃদ্ধি পেলে আংশিক জোয়ারের পানি খালে প্রবেশ করে। মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এ খালে স্নান করতে পারলে মহাপূণের অধিকারী হওয়া যায় বলে সনাতনী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস। এক সময় এ মেলা পক্ষকাল ব্যপী অনুষ্ঠিত হত। মেলায় নিত্য প্রয়োজনের যাবতীয় দ্রব্যাদি পাওয়া যায়।
মেলার কমিটি সূত্রে জানা যায়, এক সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনও ব্যাপকভাবে সমবেত হত। তখন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মেলার এক স্থানে বসে পিন্ডচারণ করত। কালের আর্বতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আগমন এখন হারাতে বসেছে। ব্রিটিশ সরকারের আমলে মেলার আগে পরে তিনদিন অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করতো নাজিরহাট শাখা লাইনে। তবে বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় লোকজন দ্রুত মেলায় আসতে পারে। ফলে এখন আর অতিরিক্ত ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয় না।
মন্দাকিনী মেলাকে সনাতনী সম্প্রদায়ের মিলন মেলা আখ্যা দিয়ে মনাই ত্রিপুরা পল্লী থেকে আসা শচিন ত্রিপুরা বলেন, আমরা প্রতি বছর মেলার জন্য অপেক্ষা করি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার পূর্ণার্থী মেলায় এসেছেন বলে জানান তিনি। মেলার শান্তিপূর্ন পরিবেশ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করলেও মন্দাকিনী খালে পানির পরিমাণ কম থাকায় পূর্ণার্থীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মেলায় আসা অনেক পূর্ণার্থীরা।
এদিকে গত ২ বছর করোনা মহামারির কারনে মেলা উদযাপন না হওয়ার কারনে এবার মেলাতে পূর্ণার্থীদের উপস্থিতি অনেক হারে বেড়েছে বলে দাবি করেছেন মেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছোটন দাশ।তিনি বলেন লাখো পূর্ণার্থীদের মিলন মেলা ঘটেছে এ বার মেলাতে।
অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভাবে মেলার কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানান হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম।