অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বানানো গরুর খামার ভেঙ্গে দিল জেলা প্রশাসন
চট্টগ্রাম :
নগরীর আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় কেটে গরুর খামার নির্মান করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ওই এলাকায় নানা কৌশলে তার লোকজন দিয়ে পাহাড় কেটে সাবার করছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু পাহাড় ধ্বংস নয় এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া পাহাড়ি ঝর্না-খালও ভরাট করে নিজের দখলে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে মামলাও রয়েছে। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নির্বিচারে পাহাড় ধ্বংস ও জলাশয় ভরাট সহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করার অভিযোগ এনে মানব বন্ধন ও সমাবেশও করেছেন।
এরই মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব পরিবেশ ধ্বংসকারি সংস্থা ও ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) তারই অংশ হিসেবে আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করায় অভিযান পরিচালনা করে স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সকাল ১১টার দিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুকের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
জানা গেছে, আকবর শাহ এলাকার উত্তর পাহাড়তলী মৌজার ১৭৮ নম্বর দাগে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির পিছনে পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় গরুর খামার নির্মাণ করছিলেন সিটি কর্পোরেশনের ওই আলোচিত-সমালোচিত কাউন্সিলর জসিম। এভাবে পাহাড় কাটার ফলে যে কোন সময় পাহাড় ধসে ও দেয়াল ভেঙে প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে। এই অভিযানের খবর পেয়ে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ছুটে এসে তিনি গরুর খামার নির্মাণ করছেন বলে জানিয়ে তা না ভাঙ্গার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক কাউন্সিলর জসিমের অন্যায় আবদারে কান না দিয়ে দেয়াল ও নির্মিত স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয় -সেই সঙ্গে নির্মান কাজও বন্ধ করে দেন।
জহুরুল আলম জসিম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক। তবে বরাবরের মতই পাহাড় কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম বলেন, ‘পাহাড় কেটে আমি গরুর খামার করিনি। এখানে কোনো পাহাড়ই নেই। এটা আমার নিজের জায়গা। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসেছিলেন ছড়া খালের মাপ নেওয়ার জন্য।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর আকবর শাহ থানার লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিম ও তার স্ত্রী সহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। এরপর গত ২৬ জানুয়ারি উত্তর পাহাড় তলীর সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটা ও ছড়া খাল দখল পরিদর্শনে যাওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে হামলার অভিযোগ আছে এই জন প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে একজন নিহত ও চারজন আহত হন। ১১ এপ্রিল সেই পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন প্রকৌশলী সহ সাত জনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদফতর। অগ্রণী ব্যংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি’র প্রায় ১১ একর আয়তনের পাহাড়টি কেটে সড়ক নির্মাণ করছিল সিটি করপোরেশন। আর এ কাজের তত্বাবধানে ছিলেন কাউন্সিলর জসিম। গত ১১ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা না মেনে চসিক তাদের কাজ অব্যাহত রাখার এক পর্যায়ে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
শনিবার অভিযান চালানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালি উদ্দিন আকবর ( ওসি) বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল, আমরা প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স দিয়েছি। একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে সেখানে পুলিশ সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, পাহাড় কাটা ও পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। অনেককেই জেল হাজতে ও অর্থদন্ড করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই অভিযানে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়। পাশাপাশি জায়গার মালিক সহ স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইন ও নিয়মিত মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান সহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই অভিযান পূর্বক জেল জরিমানা সহ অনেককেই শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা।