বিশেষ প্রতিনিধি :
বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্রডগেজ রেললাইনে চলাচলের জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশকে ২০ টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন ( লোকোমোটিভ) উপহার দিয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা ও ভারতের নদীয়া জেলার গেদে সীমান্তে এসব ইঞ্জিন হস্তান্তর করা হয়। ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দিল্লী রেলভবন থেকে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজনের কাছে এগুলো হস্তান্তর করেন। দিল্লীতে এ সময় সেখানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: মুস্তাফিজুর রহমান এবং বাংলাদেশের রেলভবনে ভারতীয় হাইকমিশার প্রণয় ভার্মা সহ উভয় দেশের রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দুই রেলওয়ের মধ্যে সহযোগিতার অপার সম্ভাবনার ওপর জোর দেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, ভারতের কাছ থেকে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে এই ২০টি বিজি লোকো হস্তান্তর বাংলাদেশের জনগণের জন্য রেল ভ্রমণকে সহজ করে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবে। এই লোকোমোটিভগুলো বাংলাদেশে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং কার্যকর ও পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়নের লক্ষ্যে রেলওয়ে যোগাযোগের আরও প্রবৃদ্ধিকরণ একটি মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পারস্পরিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। রেল সংযোগ হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারত্বের অন্যতম প্রধান উপাদান, যার মাঝে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে রেল সেক্টরের প্রকল্পসমূহ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যমানের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতিফলন হিসেবে, কলকাতা-ঢাকা, কলকাতা-খুলনা ও ঢাকা-নিউ জলপাইগুঁড়ির মধ্যে তিনটি আন্তঃসীমান্ত ট্রেন সার্ভিস চালু রয়েছে। আন্তঃসীমান্ত সংযোগ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর দৃষ্টিপাত করে, ১৯৬৫-এর আগের পাঁচটি রেলওয়ে সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং এগুলো যাত্রী ও পণ্য চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অবশিষ্ট রেলওয়ে সংযোগ সমূহ পুনরুদ্ধার করার এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নতুন রেলওয়ে সংযোগ তৈরি করার প্রকল্পসমূহও চলমান রয়েছে।
ভারতের রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব উল্লেখ করেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ গতি শক্তি’ উদ্যোগের অধীনে, কার্গো পরিচালনা ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রকল্প গৃহীত হচ্ছে এবং এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও কার্গো শেড, লুপ-লাইন, সিগন্যালিং ব্যবস্থা ও কন্টেইনার টার্মিনালসমূহের উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্পসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে। এটি ব্যবস্থাপনা খরচ আরও কমাতে এবং বাংলাদেশকে আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে সহায়তা করবে, যা উভয় দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক লভ্যাংশ বয়ে আনবে। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা বিনিময় করার প্রস্তাবও উত্থাপন করেন, কারণ বিদ্যুতায়ন হলো দক্ষতা বৃদ্ধি ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর উপায়।