
স্টাফ রিপোর্টার ,নারায়ণগঞ্জ :
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে নিজ বাড়ির ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ছয় বছর বয়সী শিশু রিয়া গোপের মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু রায়হান বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ থেকে ২০০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
রিয়া গোপ নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি এলাকার দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল। গত বছর সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত শিশুটির পরিবার মামলা করতে রাজি না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থেকে পুলিশ বাদী হয়ে এই হত্যা মামলাটি করেছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বছরের ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের মণ্ডলপাড়া থেকে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিলকারীদের ওপর হামলা চালায় এবং গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে তাদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে নয়ামাটি এলাকার নিজ বাড়ির পাঁচতলা ছাদে খেলার সময় গুরুতর আহত হয় শিশু রিয়া। গুলিটি সরাসরি তার মাথায় লাগে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত বছরের ২৪ জুলাই সে মারা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে আসে সেদিনের ভয়াবহ চিত্র। তারা জানান, ১৯ জুলাই, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তৎকালীন সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও এবং ছবিতে শামীম ওসমান, তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ বেশ কয়েকজন অনুসারীকে অস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছিল। তাদের নির্বিচার গুলিবর্ষণের সময়ই ছাদে থাকা রিয়ার মাথায় গুলি লাগে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “শিশু রিয়া গোপের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে বারবার মামলা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা মামলা করতে রাজি হননি। এটি একটি হত্যাকাণ্ড, তাই বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে। আমরা বিভিন্ন ফুটেজ ও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।”
এ বিষয়ে রিয়ার মা বিউটি ঘোষ বলেন, “মামলা করে কী হবে? আমরা তো জানি না কারা আমার মেয়েকে মেরেছে। কাদের নামে মামলা করব? আমরা বিচার সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিয়েছি।”
রিয়ার বাবা দীপক কুমার গোপের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার এই মৃত্যু দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও এতদিন কোনো মামলা না হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। প্রায় এক বছর পর পুলিশের এই পদক্ষেপে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়ার একটি নতুন আশা তৈরি হলো।