Breakingপার্বত্য অঞ্চলরাঙ্গামাটিশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

পার্বত্য অঞ্চলের আগাম আনারস যেন মৌসুমী ফলনকে হার মানাচ্ছে

চেঙ্গী দর্পন , স্টাফ রিপোর্টার, রাঙ্গামাটি : পার্বত্য অঞ্চলের নানিয়ারচরের হানিকুইন জাতের আগাম আনারস যেন মৌসুমী ফলনকে হার মানাচ্ছে। জ্যৈষ্ঠমাস আনারসের মাস হলেও বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচরে প্রতিবছরই উৎপাদিত হয় উচ্চ ফলনশীল হানিকুইন আনারস। যা দেশের অন্য কোথাও ফলন পাওয়া যায় না। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে নানিয়ারচর উপজেলা হচ্ছে আনারসের জন্মস্থান। আবার অনেকে বলে আনারসের রাজধানী নানিয়াচরচর। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে আনারসের জন্য বিখ্যাত নানিয়ারচর উপজেলা। নানিয়ারচর উপজেলার মধ্যে প্রায় ৬০ভাগ মানুষ আনারসের আবাদ বা বাগান করে থাকে। তবে বেশীর ভাগই বাঙালি জনবসতি এলাকায় আনারসের চাষ করা হয়েছে। আর এ আনারসের চাষ করে স্বাবলম্ভী হয়েছে ওই এলাকার মানুষ।

আনারস চাষী ছোবহান জানান, আনারস চাষে অনেক পরিশ্রম যদি কারও অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে সে ভাল করে তা বলতে পারবেনা। তিনি জানান,অক্টোবর মাসের আগেই আনারস চাষের জন্য পাহাড়ের ঢালুগুলো প্রস্তুত করতে হয়। প্রায় ১মাস লেগে যায় জমি ঠিকঠাক করে আনারস চাষের উপযোগি করে তুলতে। এর আগে আনারসের চারা তুলে তা প্রস্তুত করে রাখতে হয়। তার পরে সারিসারি করে পাহাড়ের বুকে লাইন ধরে রোপন করতে হয়। চারা রোপনের পর প্রায় ১২-১৩ মাস অপেক্ষার পর তাতে আনারস আসে। এর আনারস বাগানের সেবাযত্ন ও পরিচর্ষা করতে হয়। তাতেই ভাল ফলন আসা করা যায়। অনেকে বলেন আনারসের জন্ম নানিয়ারচরে আবার অনেকে বলেন আনারসের রাজধানী নানিয়ারচরে এটা শতভাগ সত্য। আনারসের সাথে এখানকার অর্থনৈতিক ভারসাম্য চলমান রয়েছে। বর্তমানে হাইব্রিড আনারস বছরে ২বার ফলন আসে তাতে শীত মৌসুমের আগেই আনারস বাজারে দেখতে পায় লোকজন।

খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, নানিয়ারচরের বউ বাজার এলাকার শাহিন,ছোবহান ফারুক প্রচুর পরিমানে আনারসের চাষ করেন। রীতিমত আনারস চাষ করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। তাদের আনারস দেশ এবং দেশের বাহিরেও রপ্তানি হচ্ছে । তারা ট্রাক ভর্তি করে আনারস ঢাকা ও চট্টগ্রাম পাইকারি হিসেবে চালান দিয়ে থাকেন। আবার যারা ছোট খাটো আনারসের বাগান করে থাকেন তারা স্থানীয় ভাবে খুচরা আনারস বিক্রি করে ফেলেন। এছাড়াও ঘিলাছড়ি ও ১৭ বা ১৮মাইল এলাকায় উপজাতিরা বেশ কিছু আনারস বাগান করেছেন।

আনারস চাষী ফারুক জানান, আনারস চাষে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রমের ফলে ভাল আনারস আবাদ করা সম্ভব।একটি আনারসে প্রায় ৫-৭ টাকা ব্যয় হয় । ভাল ফলন উৎপাদন হলে তা বিক্রি করা হয় ১০-১৫ টাকা।


কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারনে গত ২ বছর আনারসে তেমন লাভবান হতে পারেনি আনারস চাষীরা। অনেকে ব্যাংক লোন নিয়ে আনারস চাষে পুঁজি দিয়েছেন।কিন্তু করোনার জন্য লোকসান গুনতে হয়েছে। আর ব্যাংক
সুদের বোঝা এখনো টানতে হচ্ছে।

নানিয়ারচরের আনারসে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আগত পর্যটকদের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা ঘুরতে এসে একবার হলেও একটি আনারস খেয়ে যাবে। পর্যটকদের লোভ আনারসের প্রতি। তারা জানে নানিয়ারচরের আনারসে ফরমালিন নাই। অনেকে আবার ঘুরে ফিরে মুগদ্ধ হয়ে যাওয়ার সময় আনারস নিয়ে যায় পরিবার পরিজনের জন্য।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রতন কুমার পাল বলেন,রাঙ্গামাটি জেলার মধ্যে প্রায় ২১৩ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ করা হয়। তবে নিজ নিজ মালিকানাধীন জমিতেই চাষারা এই সব আনারসের চাষ করে থাকেন। তারা যদি মনে করে কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতা প্রয়োজন আছে তাহলে আমরা বিনামূল্যে সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তবে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় প্রচুর আনারস জন্মায়।

Related Articles

Back to top button