পানছড়িতে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে শ্মশানের রাস্তা নির্মান
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, পানছড়ি,খাগড়াছড়ি : পানছড়ি সদর ইউনিয়নের উপজাতীয় ৯ গ্রামের মানুষের একমাত্র শ্মশান চৌধুরী পাড়া শ্মশান।শ্মশানে যাওয়ার জন্য একটি সড়ক নির্মাণ করে দিতে ৩০ বছর ধরে ধরনা দিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে। কিন্তু রাস্তা নির্মান করে না দেওয়ায় অবশেষে নিজেদের উদ্যোগেই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করে গ্রামবাসী। ধান ক্ষেতের ছোট্ট আইল ধরে শব দেহ নিয়ে যেতে হয় শ্মশানে। প্রতিটি নির্বাচন এলেই ওয়াদা করে জনপ্রতিনিধি প্রার্থীরা। নির্বাচন শেষে চেয়ারে বসেই ভুলে যায় প্রতিশ্রুতির কথা। কথা দিয়ে কথা রাখেনি তারা। অবশেষে গ্রামবাসী নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেছেন সড়ক।
গত ২৮ জানুয়ারী ২০২১ শুক্রবার খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ার ধান্য জমির মাঝামাঝি শ্মশানের রাস্তাটি নির্মিত হয়েছে ।
জানা যায়, শ্মশানের শুরু থেকেই সদর ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম -জ্যোতিষ মেম্বার পাড়া, চৌধুরীপাড়া,জামাইপাড়া , রবি সিংপাড়া, কামিনী মেম্বারপাড়া, আচাই মহাজন পাড়া, তালুকদারপাড়া, পোড়াবাড়ি ,কলেজ পাড়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শ্মশানে যেতে হয় চৌধুরী পাড়ার প্রায় আধা কিলোমিটার ধান ক্ষেতের আইল ধরে।
চৌধুরী পাড়ার মেমং চৌধুরী বলেন, শ্মশানে শবদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরী দেওয়ার কথা অনেক নির্বাচনে প্রার্থী প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ক্ষমতায় এসে ভুলে যায়। অনেকেই শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কেউ বাস্তবায়ন করেননি। পরে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণের জন্য চলতি জানুয়ারি মাসে উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুরুব্বীদের নিয়ে সড়কের জন্য জমি দিতে দুই মালিক উগ্য মারমা ও কাজী মো. রবিউল ইসলাম এর কাছে দাবি করি। উনারা রাস্তার জন্য জমি দিতে রাজি থাকায়, স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ করেছি ।
এ প্রসঙ্গে কাজী মো. রবিউল ইসলাম বলেন,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলা বন্ধনে জম্ম থেকে এখানে বসবাস করছি। উপজাতীয় সম্প্রদায়ের শ্মশান খলাটি আমার ধানের জমির পাশেই। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কেউ মারা গেলে উনাদের শবদেহ নেওযার কোন রাস্তা নাই। শুকনো মৌসুমে তেমন কোন সমস্যা না হলেও বর্ষা মৌসুমে ধানের জমির আইল নয়ত ১ কিলো রাস্তা ঘুরে অন্যের বাড়ির উপর দিয়ে লাশ শ্মশানে নিয়ে যেতে এলাকাবাসীর কষ্ট হয়। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার পাশাপাশি উগ্য মারমা রাস্তা করার উপযোগী ভুমি ছেড়ে দেওয়ায় শ্মশানের রাস্তাটি করা গেলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৯টি গ্রামের প্রায় ৪০০ নারী-পুরুষ সড়ক নির্মাণের কাজ করছেন। পাঁচ ফুট প্রস্থ রাস্তা নির্মানে তারা নিজ উদ্যোগেই কোদাল, টুকরি, বস্তা শাবল নিয়ে কাজে ব্যস্ত। যেন কার আগে কে মাটি যেন রাস্তা নির্মান করবে তাই নিয়ে ব্যস্ত সবাই।
বিকেলে রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ হয়।
পানছড়ি উপজেলার প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা বলেন , রাস্তার জন্য ভুমি সমস্যা ছিলো। এখন সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। একজন মুসলিম ও বৌদ্ধ মিলিয়েই রাস্তার জমি দান করেছেন। এ যেনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন।