Breakingজাতীয়শীর্ষ সংবাদসারাদেশ

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চালের

চেঙ্গী দর্পন,স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সিগঞ্জ : পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে। ২১ টি জেলার জনগণের অধীর আগ্রহে অবসান ঘটিয়ে ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু ২৫শে জুন শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।৬দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পদ্মা সেতু এখন স্বপ্নের খোলস থেকে বেরিয়ে রূপ নিয়েছে বাস্তবতায়। ছয় মিনিটে অতিক্রম করা যাবে প্রমত্তা সর্বনাশা পদ্মা।

পদ্মা সেতুর নাম উচ্চারণ করলে শেখ হাসিনার নাম উচ্চারণ করতে হবে। শেখ হাসিনার নাম এবং পদ্মা সেতুর একে অপরের পরিপূরক। তাদের আলাদা করার কোন সুযোগ নেই। পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে না হলেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানবে শেখ হাসিনার কারণে এই সেতু সম্ভব হয়েছে।

৪২টি পিলার এর উপর ৪১ টি স্প্যান বসিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। দ্বিতল সেতুর আপার ডেকে চার লেনের সড়ক যার প্রস্থ ২২ মিটার। লোয়ার ডেকে থাকবে ব্রডগেজ সিংগেল লাইন রেলপথ। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে ২.১৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। টোল প্লাজা, পুলিশ স্টেশন, সার্ভিস এরিয়া-১, ওজন স্টেশন, জরুরি সহায়তা কেন্দ্র সহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে ।

সেতুটি কে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক। গড়ে তোলা হয়েছে নতুন ব্রডগেজ রেললাইন। সেতুর সংযোগ সড়কের পাশাপাশি সার্ভিস এলাকায় তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো। সেতুতে রাখা হয়েছে গ্যাস সঞ্চালন লাইন ফাইবার অপটিক্যাল ও টেলিফোন ডাক্ট।সেতুর ভাটিতে তৈরি হচ্ছে হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন।


পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর পুরো অঞ্চল জুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে।পদ্মা সেতুর বদৌলতে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও লৌহজংয়ের মানুষ প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। সেতুর সুফল বাস্তবায়নে উচ্ছ্বসিত শুধু জেলাবাসী নয় সমগ্র বাংলাদেশ। উদ্বোধনের আগ থেকেই বহুমাত্রিক প্রকল্পের মহাকর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে শ্রীনগর ও লৌহজংয়ে।স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবর্তন আর পর্যটন নির্ভর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় নতুন এই সব আয়োজন। এতে বেড়েছে এ অঞ্চলের জমির দাম। গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক শপিংমল। দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করেছে জেলার দৃশ্যপট। এক সময়ের উত্তাল পদ্মা নদীর দক্ষিন-পশ্চিম পাড়ে মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর-শরীয়তপুর জেলা দুর্গম পারাপার। সেই দুর্গমকে সুগম করেছে কাঙ্খিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু।পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশকে সংযুক্ত করেছে অভাবনীয় মাত্রায়।সরকার হাতে নিয়েছে বৃহৎ আবাসন প্রকল্প, বিসিক শিল্পনগরীসহ নানান পদক্ষেপ। এদিকে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর-লৌহজং-সিরাজদিখান উপজেলায় পাল্টে যাবে অর্থনীতির চিত্রও। ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পদ্মা সেতুকে ঘিরে। আগে পদ্মা নদী পাড়ি দেয়ার জন্য মাওয়া শিমুলিয়া ঘাটের জনভোগান্তি থাকায় বিগত দিনে বিলম্ব ছাড়া কেউ বাড়ি যেতে পারতেন না। এখন সেতু খুলে দেয়া হচ্ছে এমন খবরে স্বস্তি পাচ্ছেন স্থানীয়রাও । পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে পৌঁছানো যায় স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে।

মাওয়া চৌরাস্তা থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত ৩২ কি.মি.রাস্তাটি হবে চার লেনের বাইপাস সড়ক ও পদ্মা সেতু থেকে দোহার জয়পাড়া পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ বর্তমান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নদী শাসনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে নদী রক্ষা বাঁধ। দুই উপজেলায় তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন অট্টালিকা, রেষ্টুরেন্ট, ফাইভ স্টার মানের হোটেল,শিল্প কলকারখানা, ডেইরি ফার্ম, স্কুল,কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাট বাজার। ফসলি জমি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ঘর বাড়ি।স্বপ্নের পদ্মা সেতু কে ঘিরে বদলে গেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও লৌহজং উপজেলার চিত্র।এক দশক আগেও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে আবাদি জমি গুলো নামমাত্র মূল্যে মালিকানা বদল হতো।সেতু হওয়ার পর জমির দাম বেড়েছে ১০-১১ গুণ । এখন চড়া দামে মিলছেনা সেতু প্রকল্প ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে সংলগ্ন এলাকার জমি।মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদের মতো স্বপ্ন দেখছেন আবাসন ব্যবসায়ীরাও।উপজেলার নিমতালা এলাকা থেকে শুরু করে, শ্রীনগরের কেসিরোড,দোগাগাছি,লৌহজং উপজেলার উত্তর মেদিনিমন্ডল টোলপ্লাজা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার রাস্তার পাশে বিক্রমপুর মডেল টাউন,আইডল সিটি, বাতায়ন, সুখের ঠিকানা, মাতৃভূমি সিটি,সাউথ ঢাকা মডেল টাউন,নতুন ধারা, স্বপ্নধারা, ধরিত্রি, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ,দক্ষিণাচল, পুষ্পধারাসহ ১০-১৫ আবাসন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখা যায়।

এক্সপ্রেস হাইওয়ের দুপাশের জমিগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুষ্পধারা আবাসনের এক কর্মকর্তা বলেন পদ্মা সেতু কে কেন্দ্র করে শ্রীনগরে অনেক জমি কিনেছেন। তাদের মতো আরও অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।

শ্রীনগরের সমষপুর এলাকার বাসিন্দা কুতুব মৃধা বলেন ১০-১২ বছর আগে মহা সড়কের একটু ভিতরে যে জমির দাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা শতাংশ ছিল, পদ্মা সেতুর জন্য সে জমি এখন তারা ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। হাসাড়ার নিবাসী মোহন মোড়ল জানান মহাসড়কের পাশে এমনও জমি আছে সেইগুলো ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা দিলে পাওয়া যাবে না ভবিষ্যতে জমির দাম আরও বাড়বে বলে মনে করেন অনেকেই।

এ অঞ্চলের মানুষ বেশিরভাগ ঢাকায় বসবাস করেন। পদ্মা সেতুর বদৌলতে ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখন মানুষ গ্রামের দিকে ঝুঁকছে।গ্রামটিকে শহরে রুপান্তরিত করা হচ্ছে।

ইকোপোর্ট’ নির্মাণে প্রকল্প হাতে নিয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় রিভারক্রুজ (নদী ভ্রমণ), চরে অবকাশ যাপন কেন্দ্র, প্রাকৃতিক ওয়াকওয়ে ট্রেইল, নৌ জাদুঘর, ইকোপার্কসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হবে।পদ্মা সেতু কে কেন্দ্র করে সেখানে বছরে ৬০ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম হবে-এমন ধারণা থেকে এ বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর শিমুলিয়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অব্যবহৃত ১৫-১৮ একর জমিতে এসব স্থাপনা তৈরি হবে।এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এটি নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মসিউর রহমান মামুন জানান পদ্মা সেতু চালুর হওয়ার ফলে আমাদের এই অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হবে,নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন হবে,পদ্মা সেতু দেখতে সারাদেশ থেকে লোকজন আসবে তাদের কেন্দ্র করে ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে,মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরী হবে।

মুন্সীগঞ্জ-১(শ্রীনগর-সিরাজদিখান) আসনের সংসদ সদস্য মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন পদ্মা সেতু হয়ে উঠতে পারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর একটি অংশ যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে।সেতুটির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হবে। মাছের রাজা যেহেতু পদ্মা নদীতে।এখানকার রেস্টুরেন্ট গুলিতে বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে যা বিদেশীদের কাছে বাঙালি সংস্কৃতিকে আরো পরিচিত করে তুলবে।

মুন্সীগঞ্জ -২ (লৌহজং- টঙ্গীবাড়ি) আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপা কে ধন্যবাদ এই কারণে যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্ব কে দেখিয়ে দিয়েছেন। এটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কন্যা বলেই সম্ভব হয়েছে।আর পদ্মা সেতুর কারণে দু পাড়েই ব্যাপক উন্নতি সাধন হবে।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.মহিউদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উপহার আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর কারণে আগামী ১০ বছরে এ অঞ্চলে আমুল পরিবর্তন ঘটবে মেগা সিটি ও শিল্প কলকারখানায় বিনিয়োগ হবে ।তখন আর পিছনের দিকে তাকাতে হবে না।

Related Articles

Back to top button