চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে আড়তে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে আলুর। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি না করে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো দামে আলু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারে কোনো রশীদ ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে এসব আলু। এভাবে ‘পেপারলেস’ আলু বিক্রির ঘটনা এবারই প্রথম বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করতেই ব্যবসায়ীরা এ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ৩০ টাকা দরে আলুর সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করে দিলেও আড়তদারদের সিন্ডিকেট পাইকারি বাজারেই আলু বিক্রি করছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজিপ্রতি। চট্টগ্রামের বৃহত্তর কাঁচাবাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারেই এই চিত্র দেখা গেছে।
অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামেন এবং এসব অভিযোগের সত্যতা পান। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সকালে রিয়াজউদ্দিন বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে ১০টি আলুর আড়তদারকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানের সময় ভ্রাম্যামান আদালতের সঙ্গে ছিলেন কৃষি বিপনন বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।
অভিযান পরিচালনাকারী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, ‘কোন প্রকারের বিক্রয় রসিদ ছাড়াই আলু বিক্রি করছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সরকারের বেধে দেওয়া আলুর দাম পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা বিক্রি করার কথা। কিন্তু রিয়াজউদ্দিন বাজারে এসে দেখা যায় খুচরা ব্যবসায়ীদের তারা রসিদ না দিয়ে ৪০-৪২ টাকায় আলু কিনতে বাধ্য করছে। তারা বলছেন, ‘নিলে নেন, না নিলে যান’। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতেই মূলত আমাদের আজকের এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ অভিযানে ৪০-৪২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি এবং বিক্রি রশিদ দেখাতে না পারায় রিয়াজউদ্দিন বাজারের কুমিল্লা ট্রেডার্স, কুসুমপুরা বাণিজ্যালয়, রফরফ ট্রেডার্স, জননী ট্রেডার্স, মক্কা বাণিজ্যালয়, আবু তৈয়ব ট্রেডার্স, দাউদকান্দি বাণিজ্যালয়, শাহাবউদ্দিন ট্রেডার্স, আশীষ হাওলাদার ট্রেডার্সকে মোট এক লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের কুসুমপুর বাণিজ্যলয়ের সত্ত¡াধিকারী শওকত হোসেন বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে সবাই বিক্রি করলে আমরাও বিক্রি করতে পারি। কিন্তু আমরা কমে বিক্রি করলে বেপারিরা আমাদেরকে আলু দেয় না। আমার দাবি হচ্ছে, সব আড়তে সরকারি নির্দেশ মানা হোক। না হয় আমাদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আলুর আড়তদার কুমিল্লা বাণিজ্যলয়কে জরিমানা করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এ প্রতিষ্ঠানের সত্ত¡াধিকারী আবদুল মান্নান খোকন বলেন, ‘আমরাও অসহায়। আমরা বেপারীদের থেকে এনে আলু বিক্রি করি। সামান্য কমিশনের মালিক আমরা। কিন্তু বর্ধিত দামে বিক্রি না করলে বেপারীরা আমাদের আলু দেন না। অপরদিকে সরকারের জরিমানাও আমাদের দিতে হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত গত ২০ অক্টোবর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা পুননির্ধারণ করে সরকার। এর আগে গত ৭ অক্টোবর প্রতি কেজি আলুর দাম কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেধে দেয় কৃষি বিপণন অধিদফতর। এই দাম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু এই দামের বিষয়ে আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে তারা আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন। পরে গত ২০ অক্টোবর মঙ্গলবার এক সভায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলুর দাম কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে কেজি ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে কেজি ৩৫ টাকা পুননির্ধারণ করা হয়।