Breakingখাগড়াছড়িচট্টগ্রাম অঞ্চলপার্বত্য অঞ্চলশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

পানছড়িতে সনাতনীদের ১০ মন্ডপে দূর্গাপূজা ও সাঁওতালদের দাঁশাই উৎসব শুরু

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, পানছড়ি ,খাগড়াছড়ি :


জেলার পানছড়ির সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দাঁশাই উৎসব ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে।

১ অক্টোবর ২০২২ শনিবার থেকে মহা ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে ৫ দিন ব্যাপী শারদীয়া দূগোৎবের শুরু হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্যে দিয়ে দূর্গাদেবীকে বিদায় জানাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

এবার সিমান্ত এলাকা পানছড়িতে ১০টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল রাত পর্যন্ত লাইটিং ও বিভিন্ন সাজ সজ্জার মধ্যে দিয়ে প্যান্ডেলের সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পূজা মন্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি পূজামন্ডপে গতকাল থেকে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আজ সকাল থেকে প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে মায়ের বোধনের কাজ শুরু হয়েছে। সকাল থেকে মন্দিরে মন্দিরে ঢাকে কাঠি পড়েছে। এ পূজাকে ঘিরে প্রতিটি মন্দির কমিটি তাদের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করেছেন। প্রায় প্রতিটি মন্ডপকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

সাঁওতাল পাড়ার লোকনাথ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত দেব মানিক জানায়, আমরা উপজেলার মঠ-মন্দিরের সভাপতি-সম্পাদকদের সাথে বৈঠক করেছি। যাতে করে যথাযথ ভাবে সরকারি নির্দেশনা মেনে পূজা উদযাপন করা হয়। প্রতিটি মঠ-মন্দিরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি আমাদের কোন ধরণের সমস্যা হবে না। আমাদের কোন ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপ নেই। আমরা মা দুর্গার কৃপায় সুন্দর ভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারবো বলে আশা রাখছি।

পানছড়ির দেবালয় মন্দিরের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার দেব জানান, আমাদের দেবালয় মন্দিরটি উপজেলা সদরে হওয়ায় পূজা উৎসব সব চেয়ে বড় হয়। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। আমরা পূজাতে সকল ধর্মের মানুষের সহযোগিতা পেয়ে থাকি। পূজা আয়োজনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিকভাবে সহযোগিতা করে থাকে। আমাদের প্রতিবছরই নানান থিমে আমরা প্রতিমা তৈরি করে থাকি। ঠিক এবছরও আমরা একটি থিমের ওপর প্রতিমা তৈরি করেছি। আশা করছি আমরা খুবই শান্তি পূর্ণভাবে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও দূর্গাপূজা উদযাপন করতে পারবো।

সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দাঁশাই নাচ

অপর দিকে , পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্টীর সাঁওতাল সম্প্রদায় বসবাস করে। সনাতনী ধর্মালম্বীরা দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে, শুভ শক্তির সূচনা এবং অশুভ শক্তির বিনাশের আশায়। ষোড়শোপচারে পুজো চলে দেবীর। ঠিক সেই সময়েই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের আরাধ্য হয়ে ওঠেন হুদুড় দুর্গা। আর এই হুদুড় দুর্গার পুজোর সময়েই মহা নবমীর দিন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ পালন করেন এই দাঁশাই উৎসব।পানছড়ি সাঁওতাল সম্প্রদায় এই সময় শুকনো লাউয়ের খোল ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করে বিশেষ ধরনের বাদ্য যন্ত্র যার নাম ‘ভুয়ং’। পুরুষরা ধুতি পরে সাদা পোষাকে বেশে সজ্জিত হয়, তাদের মাথায় থাকে ময়ূরের পালক। দাঁশাই নাচের সময় অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষরা হাতে, গলায় নানাবিধ অলঙ্কারও পরে পাড়ায় পাড়ায় নাচ গান করে প্রতিটি পুজা মন্ডপে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।

কানুনগো পাড়ার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের গ্রাম্য প্রধান মিলন সাঁওতাল জানায়, সাঁওতালিদের সংস্কৃতিতে বছরের একটি মাসের নাম দাঁশায় যা কিনা বাঙালিদের শরৎকালের সমসাময়িক। এ সময় হুদুড় দুর্গাকে স্মরণ করে ভুয়ং বাজনা নিয়ে নাচ-গান করেন, সেরেঞ মাতাল আসরে মেতে ওঠেন সকলে। এই উৎসবের বাঁশি বাঁজিয়ে ঢাক ঢোল বাজিয়ে দাঁশাই গান আর বিশেষ নৃত্য শৈলীতে দাঁশাই নাচ নেচে থাকে। আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন দাঁশাই উৎসব প্রতিবছর পালন করে থাকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আফরোজ বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে ও আনন্দঘন পরিবেশে শারদীয় দূর্গোৎসব উদযাপন করতে পারে তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পূজায় সকল মণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Related Articles

Back to top button