ঢাকা কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে কর্মবিরতি

স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি : ঢাকা কলেজে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা এবং শিক্ষক লাউঞ্জ ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের ন্যায় খাগড়াছড়িতেও প্রতিবাদের ঝড় বইছে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজ ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের শিক্ষকরা কালো ব্যাজ ধারণ করে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।
কলেজ প্রাঙ্গণে সকালে শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে শিক্ষক লাউঞ্জে অবস্থান নিয়ে নীরব প্রতিবাদ জানান। তাঁদের হাতে ছিল কালো পতাকা ও প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ছিল— “শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ”, “সন্ত্রাসী হামলার বিচার চাই”, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা চাই”।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজে শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা একটি জঘন্য ও ন্যাক্কার জনক ঘটনা। এই হামলা কেবল একজন শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর ওপর নয়, এটি পুরো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আঘাত। তাঁরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পুলক বরন চাকমা, শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক আব্দুস সালাম, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক আবু ছৈয়দ মোহাম্মদ মুজিব, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মঈন উদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, শিক্ষকরা জাতি গঠনের কারিগর, তাঁদের উপর এমন অমানবিক হামলা কোনো সভ্য সমাজে কাম্য নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ সময় খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, রয়ায়ন বিভাগের প্রভাষক আবু ছৈয়দ মোহাম্মদ মুজিব,ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মঈন উদ্দিন, অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মেহেরুন্নিছা বেগম সহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
এদিকে, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজেও একই দাবিতে সকাল থেকে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ ধারণ করে কর্মবিরতি পালন করেন। কলেজে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে এলেও শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। ফলে শিক্ষার্থীরা নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সরাফত হোসেন বলেন, “আমরা দেশের শিক্ষক সমাজের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। ঢাকায় সংঘটিত ঘটনাটি শিক্ষক সমাজের মর্যাদাকে গভীরভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন,আজকে আমরা সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়িতেও কলেজের সকল ধরনের পরীক্ষা ও শ্রেণী কার্যক্রম স্থগিত করেছি।
শিক্ষকরা জানান, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এখনই প্রয়োজন কঠোর অবস্থান ও কার্যকর পদক্ষেপ। তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, দ্রুত বিচার আইনে এই ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা চালাতে সাহস না পায়।
দিনব্যাপী এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাঁদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানালেও, খাগড়াছড়ি জুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও উদ্বেগের পরিবেশ।
সবাইয়ের একটাই দাবি—“শিক্ষার পবিত্র অঙ্গনে আর কোনো সহিংসতা নয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক।”