Breakingঅপরাধখাগড়াছড়িচট্টগ্রাম অঞ্চলপার্বত্য অঞ্চলশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

রামগড় চা বাগানের বরাদ্দকৃত ভূমির শ্রেনি পরিবর্তন করে কর্তৃপক্ষের মৎস চাষ

চেঙ্গী দর্পন, বিশেষ প্রতিবেদক , খাগড়াছড়ি :
চট্টগ্রাম জেলার উত্তরের উপজেলা ফটিকছড়িতে অবস্থিত প্রায় ১৪ শ একরের রামগড় চা বাগানে যেন অনিয়মের বালাই নেই। অনিয়ম ধামাচাপা দিতে বাগানের ভিতরে সাংবাদিক প্রবেশের ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক কড়াকড়ি। চা বাগানের জন্য জমি লীজ নিয়ে বেআইনীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আলাদা হ্রাদ। হ্রদে বছর জুড়ে চলে মৎস প্রকল্প। এজন্য বরাদ্দকৃত জমির শ্রেনী পরিবর্তন করা হয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফটিকছড়ির রামগড় চা বাগানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে মৎস্য প্রকল্প ও অন্য প্রজাতির গাছের বাগান। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর চলছে এসব। অভিযোগ রয়েছে চা বাগানের শ্রমিকদের দখলে থাকা জলাশয় থেকে জোর পূর্বক উচ্ছেদ করে বাগান কতৃপক্ষ এই অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন এক প্রকার নির্বিকার বলে দাবী বাগান শ্রমিকদের।

 

জানা যায়, প্রায় ৫০ একরের জমি খনন করে এই কৃত্রিম হ্রদে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তোলেন বাগান কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের ভোগদখলীয় জমি থেকে তাদের জোর পূর্বক উচ্ছেদ করে সেখানে এই মৎস্য প্রকল্প এবং নানা প্রজাতির নারকেল গাছ এবং সুপারি গাছের বাগান করা হয়েছে। যা চা বাগানের সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভুত। বাংলাদেশ চা বোর্ড ও ভূমি মন্ত্রনালয়ের ইজারা নির্দেশনায় চা বাগানের বরাদ্দকৃত ভূমিতে চা চাষ ব্যতীত অন্য কোন ফসল আবাদ, বা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবেনা। তবে অনাবাদি জমিতে জেলা প্রশাসক ও চা বোর্ডের সুপারিশ সাপেক্ষে ভূমি মন্ত্রানলয়ের অনুমোদনক্রমে কৃষি শিল্প গড়ে তোলা যাবে। এমনকি বলা আছে ভূমি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ ব্যতীত কোনভাবেই চা বাগানের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবেনা। অভিযোগ রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই এই বৃহৎ প্রকল্প গড়ে উঠেছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধভাবে গড়ে উঠা এই মৎস্য প্রকল্প ঘিরে নেয়া হয়েছে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ এই প্রকল্পে। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলায় সম্প্রতি শ্যামা সিং এবং মঞ্জু সরদার নামে দুইজন শ্রমিকদদের কাজ থেকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়। মৎস্য প্রকল্পে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ হয় । বছরে কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। তাছাড়াও বাগানে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে নারিকেল গাছ এবং সুপারি গাছের বৃহৎ আকারে বাগান করা হয়েছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, চা বাগানে অবৈধ ভাবে মাছের প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। এটির কোন অনুমোদন নেয়। চট্টগ্রামে অবস্থিত পেডরোলো গ্রুপের হালদা ফিশারিজ লিমিটিডের ক্যাশ মেমো ব্যবহার করে এই প্রকল্প থেকে মাছ বিক্রি করা হয়।

 

আরেকজন শ্রমিক নেতা জানান, ২০২০সালে শ্রমিকদের সাথে দ্বন্ধের পরে মালিকপক্ষ তাদের মাছ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তিনি আরো জানান, শ্রমিকদের দখলে থাকা ভূমি থেকে তাদের সরিয়ে মৎস্য প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হয়। এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ করলে মালিকপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে।

 

ফটিকছড়ির বাগান বাজার এলাকার এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, চা বাগানের মৎস্য প্রকল্প থেকে ছোট মাছ বিক্রির চুক্তি তাকে দেওয়া হয়েছে। হ্রদ থেকে মাছ ধরে তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দামে সেগুলো বিক্রি করেন। আর বড় মাছ গুলো কতৃপক্ষ চট্টগ্রামে তাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে দেন।

 

চা বোর্ডের সচিব মোসা: সুমণী আক্তারের মতে চা বাগানের জন্য জমি লীজ অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে অন্য কাজে ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি নিতে হবে। ফটিকছড়ির রামগড় চা বাগানে বিনা অনুমতিতে এধরনেরে করলে তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।

 

রামগড় চা বাগানের ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন রামগড় চা বাগানে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মৎস বিষয় অস্বীকার করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ইরিগেশন প্রকল্প করা হয়েছে। এখানে কিছু মাছ চাষ হতে পারে। তবে এসব কিছুর আমাদের অনুমোদন আছে।

 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল বলেন, চা বাগানেরর জন্য জমি লীজ নিয়ে অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবেনা, এক্ষেত্রে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করাও যাবেনা।

 

Related Articles

Back to top button