Breakingপার্বত্য অঞ্চলরাঙ্গামাটিশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

রাঙ্গামাটি হতে ৫ উপজেলার লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ

লঞ্চ যাত্রীদের ভোগান্তি

চেঙ্গী দর্পন , স্টাফ রিপোর্টার , রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সাথে ৫ উপজেলা সদরের সাথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে এসব উপজেলাগুলোতে লঞ্চ যেতে পারছে না। তার একটাই কারন কাপ্তাই হ্রদে নব্যতা দেখা দিয়েছে। অতিবর্ষণ ও ভারী বৃষ্টিপাত না হলে এই মৌসমে কাপ্তাই হ্রদের পানি সীমা রেখার নিচে চয়ে যায়। যার কারনে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

৫ উপজেলা সদর হচ্ছে,বাঘাইছড়ি,নানিয়ারচর,বরকল,জুরাছড়ি ও বিলাইছড়িতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। লংগদু যাত্রী কল্যাণ সমিতির আহবায়ক তরুণ আইনজীবী এ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক মুঠো ফোনে জানান, জেলা সদর থেকে লংগদু আসতে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগে । যাত্রীদের দুর্ভোগ,কষ্ট নিদারুন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে শিশু বাচ্চা ও গর্ববতী মা বোনদের যে হারে কষ্ট হচ্ছে তা না দেখে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। প্রতি বছর এই সময়ে এ লংগদু সহ ৫ উপজেলার মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকে না।

অন্য দিকে জেলা সদরের ফিসারি ঘাট থেকে স্পীড বোট ছাড়ে সেখানেও তারা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। স্পীড বোট সেবারমানও তেমন ভাল না। রাজ্জাক আরো বলেন, লংগদু উপজেলার সাথে বাঘাইছড়ি এবং নানিয়ারচর কানেটিং রোড চালু করা হলে আপাতত তিন উপজেলার মানুষ সহজে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হতো। এক দিকে সময় বাচত অন্য দিকে খরচ বেচে যেত। জীবন যাত্রারমান আরো উন্নত হতো। মুহুর্তে জেলা সদরের কাজ সেরে নিজ নিজ স্থলে চলে যেত পারতো তিন উপজেলার মানুষ।

বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক দীলিপ কুমার দাশ বলেন,উপজেলার সাথে জেলা সদরের যাতায়াত ব্যবস্থা দীর্ঘ বছরের। চরম দূর্ভোগ হতে যাত্রীরা রক্ষা পেতে মারিশ্যা হতে লংগদু ভায়া নানিয়ারচর পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়ক দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন বাঘাইছড়িবাসী।প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬ মাস কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যায় তাই লঞ্চ চলাচলে বাধা গ্রস্থ হয়ে লঞ্চ যাত্রীরা জেলা শহর খাগড়াছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটি জেলা সদরের যেতে হয়। দুর্ভোগের শেষ নেই বাঘাইছড়িবাসীর। এদিকে রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি বাস মালিক সমিতি নানান অজুহাতে বিরতিহীন (শান্তি পরিবহন) নামের বাস বন্ধ করে দিয়েছে।

বাঘাইছড়িবাসীর দাবি বাঘাইছড়ি টু লংগদু ভায়া নানিয়ার চর কানেটিং সড়ক চালু করা হলে তিন উপজেলার যাত্রীরদের যাতায়াত সহজ হবে এবং হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে। লঞ্চ যাত্রীরা বলেন,আর কত বছর কষ্ট করে যাবো। বিশেষ করে বাঘাইছড়ি,লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল,জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এসব দুর্গম উপজেলার মানুষের এসময় জেলা সদরে আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।জরুরী কাজে আসলে স্পীড বোড ভাড়া করে আসতে হয়।এত ব্যয় বহুল খরচ সবার দ্ধারা সম্ভব নহে। সরকার মেগা প্রকল্প হাতে নিলে প্রথমে বাঘাইছড়ি,লংগদু ও নানিয়ারচরের সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্ভব হতো। পর্যাক্রমে অন্যান্য উপজেলাগুলো ধীরে ধীরে সড়ক পথ সৃষ্টি হতো। ছোট বেলায় শুনেছি কাপ্তাই হ্রদ ডেজিং করা হবে। কিন্তু বুড়া হয়ে গেলাম কাপ্তাই হ্রদ ডেজিং হতে দেখলাম না।

রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি মোঃ মঈন উদ্দিন সেলিম মুঠোফোনে বলেন, প্রায় ৫ উপজেলার সাথে জেলা সদরের সাথে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই লঞ্চ নিয়ে বড়ই বিপদে আছি। প্রতি বছর এই মৌসুমে হ্রদে পানি না থাকলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসব বিষয়ে নদী রক্ষা জাতীয় কমিটি ও নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে অনেক বার চিঠি লিখেছি।জেলা প্রশাসকগন অনেক বার প্রস্তাব পাঠিয়েছে।তার পরেও কাপ্তাই হ্রদ ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হচ্ছে না। সরকারবে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিয়েও লঞ্চ চালাতে পারচ্ছি না। আর কোন প্রকার বৈধতা ছাড়াই অবৈধ ভাবে চলছে রাঙ্গামাটিতে স্পীড বোট দিয়ে যাত্রী সেবা। বর্তমানে আমার বেশ কয়েকটি লঞ্চ বসে আছে। বেকার হয়ে পড়েছে লঞ্চ ষ্টাফরা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন,কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং সংক্রান্ত ব্যাপারে উপর মহল থেকে কোন সুরাহ এখনো আসেনি।তবে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে।কাপ্তাই হ্রদ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব রয়েছে। আর নানিয়ারচর হয়ে লংগদু হয়ে বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ ব্যাপারে সরকারের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। হয়তো বা সময় লাগছে।আমার জানামতে নানিয়ারচর,লংগদু হয়ে বাঘাইছড়ি সড়ক পথের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাহাড়ের উন্নয়ন করতে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক।

প্রসংগত- ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ দেওয়ার পরে হ্রদের সৃষ্টি হয়। কাপ্তাই হ্রদে কোন জোয়ার ভাটা নাই।বদ্ধ জলরাশি এশিয়া মহাদেশের সর্ব বৃহৎ হ্রদ এটি। এর আয়তন ৭২৫ বর্গকিলোমিটার। কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মাছ আহরণ করে জেলেরা। এ মাছের রাজস্ব আদায় করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোারেশন(বিএফডিসি)।কাপ্তাই লেকের মাছ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়।হ্রদে প্রতি বছর ৬-৭ মাস জেলার ৫ উপজেলায় যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে।

Related Articles

Back to top button