চট্টগ্রাম অঞ্চলসারাদেশ

মিরসরাইয়ে কাল বৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে বসতঘর সহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কাল বৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে ফসল, ঘরবাড়ি ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

 

সোমবার (৬ মে) দুপুর থেকে শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড় প্রায় দেড় ঘন্টা তান্ডব চালিয়েছে। প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার অনেক জায়গায় ঘর বাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। উড়ে গেছে বসতঘরের টিনের চাল। উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। বড় বড় গাছ পড়ে বন্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল। এছাড়া সড়কের উপর গাছ উপড়ে পড়ে বন্ধ রয়েছে আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচলও।

 

প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় বোরো ধান, আম ও কাঠালের অনেক ক্ষতি হয়েছে। গাছ পড়ে উপজেলা ভূমি অফিসের একটি ভবন ভেঙ্গে গেছে। এদিকে বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ে টিন উড়ে এসে পড়ে সিএনজি চালক আমলমগীর গুরুত্বর আহত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় বজ্রপাতে আতঙ্কিত ২০জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার মিঠাছরা এলাকায় লাইনে বজ্রপাত হয়ে তিন ইঞ্চি পাইপ ফেটে যাওয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ।

 

জানা গেছে, কাল বৈশাখী ঝড়ে বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভা, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, মিঠানালা, ওয়াহেদপুর, দুর্গাপুর, খৈয়াছড়া, কাটাছরা ও ইছাখালী ইউনিয়নে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে গাছপালা উল্টে গেছে। অনেক জায়গায় গাছ পড়ে ভেঙ্গে গেছে ঘর-বাড়ি। এছাড়া উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে গাছপালা ভেঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিঠাছরা বাজার অংশে চট্টগ্রামমুখী লেইনে গাছ উপড়ে পড়লে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে প্রায় ৩ ঘন্টা পর গাছটি কেটে সরিয়ে নিলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে বসানো বেশ কয়েকটি বিলবোর্ড ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙ্গে পড়েছে।

 

কাটাছরা ইউনিয়নের কৃষক মুসলিম উদ্দিন বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে আমার জমিতে চাষ করা প্রায় ১ হাজার ২শত ৫০ পিস সাম্মাম গাছ মাটির সাথে মিশে গেছে। অনেক গাছে ফলনও এসেছিলো। এতে প্রায় আমার লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

আবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়া দেখে ক্লাসের ভিতরে আতঙ্কিত হয়ে আমার বিদ্যালয়ের সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

 

মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ কাশেম বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে আমার এলাকার অনেক জায়গায় গাছ-পালা ভেঙ্গে অনেক ঘর বাড়ির টিন উপড়ে গেছে এবং সড়কে গাছ পড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

 

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহমেদ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা ভেঙ্গে বিদ্যুতের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের অফিসের আওতাধীন প্রায় ৩০ টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। অসংখ্য জায়গায় গাছপালা ভেঙ্গে তার ছিঁড়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার আরও বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আরও অর্ধশত বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে যেতে পারে। আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছে, তবে কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছেনা।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলাজুড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপর বেশী ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। তিনি আরো বলেন, মিঠাছরা এলাকায় লাইনে বজ্রপাত হয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কর্মীরা এসে লাইন মেরামতের কাজ করছে।

Related Articles

Back to top button