মানিকগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকা আমেরিকায়
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
নার্গিস আকতার ও নাছরিন আকতার নামে দুই বোন আমেরিকায় বসবাস করলেও কাগজ-কলমে তাঁরা মানিকগঞ্জের পৃথক দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই দুই শিক্ষক ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য রেজাউল করিম উজ্জল দর্জির বোন। নার্গিস আকতার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৬৯ নং হিজুলিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আর নাছরিন আকতার ২২নং হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। কাগজকলমে তাঁরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকরি করলেও প্রকৃতপক্ষে উভয়েই পরিবারসহ বাস করেন আমেরিকায়। সরকারি দপ্তরকে অবহিত না করেই তাঁরা আমেরিকায় বসবাস করছেন। দীর্ঘদিন তাঁরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হলেও প্রথমদিকে দুই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে মুখ বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু অনুপস্থিতির পাল্লা ভারি হলে এবং শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হলে বিষয়টি জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়। তখন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কেন তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে না মর্মে চিঠি ইস্যু করেছেন।
দুই বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাছরিন আকতার ও নার্গিস আকতার বিদ্যালয়ে আসছেন না। তাঁরা কোথায় আছেন সঠিকভাবে জানিনা। তবে শুনেছি, আমেরিকায় বসবাস করেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনীতা রানী তরফদার জানান, তিনি শুনেছেন ওই শিক্ষক দেশের বাইরে আছেন। তবে ওই শিক্ষক আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে কিছু জানাননি। প্রধান শিক্ষক আরো জানান, নাছরিন আকতারকে চার দফা নোটিশও দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খল ও আপিল বিধিমালা) ২০১৮ মোতাবেক চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছেন।
৬৯ নং হিজুলিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রূপা আক্তার জানান, সহকারী শিক্ষক নার্গিস আকতার দীর্ঘদিন যাবৎ বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশে নার্গিস আকতারের বাড়িতে একাধিকবার নোটিশ প্রদানসহ বাড়ির দরজায় নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইটে এখনো তিনি চাকরিতে বহাল আছেন।
এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে উজ্জল দর্জির মোবাইলে ফোন দিলে তাঁর স্ত্রী ফোন রিসিভ করে জানান, আমার স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ। এখন তিনি কথা বলতে পারবেননা। আমিও এ বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছিনা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাসিনা আকতার পারভীন জানান, এই দুই শিক্ষকের অনুপস্থিতির বিষয়টি আমি টাইম টু টাইম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। এ বিষয়ে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এই দুই শিক্ষকের ফাইল নিয়ে আমাকে অফিসে যেতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে একটি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, আমি মাত্র একমাস আগেই এখানে যোগদান করেছি। আমার আগের কর্মকর্তা এ বিষয়ে বিভাগীয় মামলা করেছেন। এখন রায়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।