নদী খনন কার্যক্রম শুরু হলেও ফলাফল শূন্যের কোঠায়
মানিকগঞ্জের ড্রেজিং কার্যক্রম
স্টাফ রিপোর্টার,মানিকগঞ্জ :
আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটের নাব্যতা সংকট দূরীকরণের লক্ষ্যে বিপুল বাজেটের নদী খনন কার্যক্রম শুরু হলেও ফলাফল শূন্যের কোঠায়। এ কাজের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারিদের পকেট ভারি হচ্ছে বলে অভিযোগ নদীপথ ব্যবহারকারী চালক, যাত্রী ও স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই নৌ-পথে নাব্যতা সংকট দূর করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালিত হলেও মিলছে না তেমন কোন সুফল। রহস্য জনক কারণে, সমস্যা দূরীভূত না হয়ে ক্রমেই বাড়ছে নাব্যতা সংকট। ফলে এই নদীপথে চলাচলকারী ফেরীগুলো মাঝে মধ্যেই আটকে যাচ্ছে ডুবোচরে। ড্রেজিংয়ে নদীর বালু নদীতে ফেলার বিধান না থাকলেও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে নদীর বালু কেটে ফেলছেন স্রোতের উজানে। দিনশেষে জায়গার মাটি পুনরায় জায়গায়ই চলে আসছে। বিশাল বাজেটের এহেন লোকদেখানো কার্যক্রমকে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের টাকা কামানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ড্রেজিংয়ের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। এই নৌ পথটি যেন সরকারের টাকা লুটপাটের একটি আস্তানায় পরিণত হয়েছে। এই সেক্টরে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারিই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। এ বিষয়ে দুদক কর্মকর্তাদের নজর দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২৬, ২০ ও ১৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের কাটার দিয়ে ড্রেজিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। এতে ঘণ্টায় যথাক্রমে ৫শ, সাড়ে ৩শ ও ৩শ ঘনফুটের বেশি মাটি কাটা সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি ড্রেজার প্রতিদিন ১০ ঘন্টা চালানো যায়। গত ৬৭ দিনে প্রায় ১৩ লক্ষ ঘনমিটার মাটি কাটা হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্য মাত্রার ৩ ভাগের ১ ভাগ মাটি কাটাও সম্ভব হয়নি। এই পরিসংখ্যানুযায়ী লক্ষ্য মাত্রায় পৌঁছতে আরো ৪ মাস সময় প্রয়োজন।
একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে পরিমাণ মাটি কাটার হিসাব দেখানো হয়েছে ওই মাটি তীরে ফেললে তীরবর্তী এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রনে একটি বাঁধ হয়ে যেত।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, নদীতে স্রোতের বেগ বেশি হওয়ায় ড্রেজিংয়ে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এর একটি স্থায়ী সুফল পাওয়া যাবে।
বিআইডব্লিউটিএ‘র চিফ প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম জানান, নৌ-পথগুলো তাদের নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর হতে ড্রেজিং করা হচ্ছে। একচল্লিশ লক্ষ ঘনমিটার মাটি কাটার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এজন্য খরচ হবে ২০ লক্ষ লিটার তেল। যা সরাসরি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) হতে সংগ্রহ করা হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ডিজেলের ডিপো রেট একশত এক টাকা বাইশ পয়সা। সেই হিসেবানুযায়ী ২০ লক্ষ লিটার ডিজেলের দাম ২০ কোটি ২৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এর সাথে যোগ হবে খরচাপাতি।
বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, ড্রেজিংকৃত কোন মাটি নদীতে ফেলা হয় না। তবে লঞ্চঘাট বরাবর খননকৃত নতুন চ্যানেলের মাটি চ্যানেল এলাকার পার্শ্বে সিইআইজিএস কর্তৃক নির্দেশিত চরে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
সিইআইজিএস কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানান, ফাইল না দেখে এবিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না।