খাগড়াছড়িতে তিনদিন ব্যাপি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে আলো ছড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ,খাগড়াছড়ি :
পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতির শহর খাগড়াছড়ি এবার যেন রঙিন হয়ে উঠেছে জ্ঞানের আলোয়।এবারের ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও মেলা,যার প্রতিপাদ্য: “জ্ঞান-বিজ্ঞানে করবো জয়, সেরা হবো বিশ্বময়”।
১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার দুপুরে জেলা শহরের অফিসার্স ক্লাব অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান ও শ্রেষ্ঠ প্রজেক্ট তৈরির স্টলদের পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার এবং এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক রুমানা আক্তার।
এ তিনদিন ব্যাপি এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ স্বপ্নের প্রদর্শনী অংশ নেয়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা নতুন নতুন প্রজেক্ট প্রদর্শন ও প্রজেক্ট সম্পর্কে উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত প্রজেক্ট গুলো হচ্ছে : অর্থনৈতিক উন্নয়নে টিস্যু কালচার,বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ,কৃষি বিদ্যুৎ,ল্যান্ড,এয়ার পলিওশন,উন্নত গ্রামীণ জীবনযাত্রা,স্বপ্নের দীঘিনাল্,পলিমেট হাউজ,বন্যা প্রতিরোধী ভাসমান খাদ্য গুদাম,নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে পরিবেশ বাঁচাঢ,গ্রাম বাঁচাই,প্রতিরক্ষা ও প্রগতি সহজর “স্মার্ট গার্ডিয়ান্স,বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও দূষিত বায়ু পরিশোধন, দূষিত বায়ু পরিশোধনকারি অঞ্চলেে উন্নত সংস্করণ,ভূমিকম্প সহন শীল স্থাপনা, সেফটি রোড, এসো গ্রাম উন্নত করি, ইকো-ফ্রেন্ডলি খাগড়াছড়ি,রিসাইক্লিং ফ্যাক্টরি,স্বপ্নের বাংলাদেশ,তৃষ্ণার্ত রাস্তা,পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থা,প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনঃব্যবস্থাপনাসহ নানান ধরনের প্রজেক্ট।
এ সব মডেল শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতাই নয়, ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা সমাধানের চিন্তাভাবনার প্রমাণও দেয়। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের নির্দিষ্ট চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা কিছু উদ্ভাবন মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান,“আমাদের এলাকায় ইন্টারনেট বা বিদ্যুৎ সবসময় পাওয়া যায় না, তাই আমরা এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছি যা কম শক্তিতে চলবে। এই মেলায় এসে বুঝেছি, আমি চাইলে নিজের ছোট্ট চিন্তাকেই একটা বড় উদ্ভাবনে পরিণত করতে পারি।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) রুমানা আক্তার বলেন,”তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে হলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিবছরের তুলনায় এবছর ব্যাপক ছাড়া পেয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন,বর্তমান যুগের ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই স্মার্ট এবং সৌভাগ্যবান যে,তারা আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যে সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে বা পাওয়া উচিত সেগুলো তারা পাচ্ছে,আমাদের সময় এই সুযোগ সুবিধাগুলো পায়নি। খুদে বিজ্ঞানী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ খুবই চমৎকার হবে। এছাড়াও পড়াশোনার পাশাপাশি বিজ্ঞান – প্রযুক্তির চর্চাও সমানভাবে করে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান চর্চার অলিম্পিয়াড নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা ও সেমিনারের মাধ্যমে যে আগ্রহ সৃষ্টি হলো,আমি মনে করি এটি তাদের দীর্ঘদিনের চর্চার মাধ্যমে বাস্তবতায় পরিনত করতে পেরেছে। আমাদের পার্বত্য খাগড়াছড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও,আমাদেরকে যে বিজ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছে এবং নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। উদ্ভাবনী সৃষ্টি তারা যেন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজের এবং সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে এমন টা প্রত্যাশা থাকবে।
খাগড়াছড়িতে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ অনুষ্ঠান প্রমাণ করেছে,উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা আর সঠিক দিক নির্দেশনা থাকলে, সবচেয়ে দুর্গম জায়গা থেকেও নতুন দিগন্তের সূচনা সম্ভব বলে মনে করছেন আয়োজক কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
এ সময় খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা,খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পুলক বরণ চাকমা,সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. আব্দুর বাতেন মৃধা-সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।