Breakingচট্টগ্রাম অঞ্চলশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

কর্নফুলী তীরের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ধ্বংস করে বেসরকারি ড্রাইডক নির্মান প্রক্রিয়া চলমান

স্টাফ রিপোর্টার ,চট্টগ্রাম :

চট্টগ্রামে মেরিন একাডেমির কাছে কর্নফুলী নদী তীরের বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নির্বিচারে ধ্বংস করে বেসরকারি ড্রাইডক নির্মান প্রক্রিয়া এবং শাহ আমানত সেতুর কাছে নদীর জায়গাতেই মৎস্য অবতরন কেন্দ্র বা ফিশারি ঘাট ও অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা দেখে চরম ক্ষোভ-হতাশা ব্যক্ত করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ।

৮ নভেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি এসব এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি দখলদারদের বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারন করে বলেন, বিভিন্ন নামে বেনামে সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে নদী দখল-দূষন ও অবৈধ ভাবে স্থাপনা নির্মানকে কোন ভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবেনা।

 

আনোয়ারায় কর্নফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগড়ের মোহনার কাছে মেরিন একাডেমির পাশে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের অসংখ্য গাছ নির্বিচারে কেটে সেখানে কর্নফুলী ডকইয়ার্ড নামে একটি ইয়ার্ড তৈরীর কর্মকান্ড দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান।

 

পরিদর্শনকালে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কর্ণফুলী নদী দখল করে কোনো টার্মিনাল স্থাপন করার জন্য কখনও সরকার অনুমতি দেয়নি। সরকার বাহুদুরের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ ভাবে নদী দখল করে গড়ে উঠা সব স্থাপনা গুড়িয়ে ফেলা হবে খুব শীঘ্রই। কোনো অপশক্তি এসব রক্ষা করতে পারবে না।

 

পরিদর্শনকালে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ,সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আবদুল্লাহ্ আল মুমিন, মেরিন একাডেমীর কমান্ড্যান্ট ড.সাজিদ হোসেন কর্ণফুলী ড্রাইডক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

বিকেলে শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ মাছ বাজার ও বরফ কল পরিদর্শন শেষে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, আমি যেখানে দাড়িয়ে আছি এটা কর্ণফুলী নদী কিন্তু এখানে এখন মাছ বাজার এবং হাজারও অবৈধ স্থাপনা। বাংলাদেশের অন্য নদীর সাথে কর্ণফুলীর তুলনা হবেনা। অন্য নদী আর কর্ণফুলী এক নয়। কর্ণফুলী নদী দখল হয়ে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। সুতরাং অন্য নদীর সাথে এর তুলনা করা ঠিক হবে না। এই নদীর বায়োডাইভারসিটি যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে।

 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নদী ড্রেজিং করে ভরাট করার যে বিষয়ে আপনারা যে কথা বলছেন তা আমরা মেনে নিব না। ড্রেজিং করা হয় নদী রক্ষা করতে। নদী ভরাট করতে নয়। এসময় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চলের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

 

সকালে মেরিন একাডেমির পাশে নির্মিতব্য কর্ণফুলী ড্রাইডকের ম্যানেজার মো. সোলায়মান নিয়াজী দাবি করেন ,মেরিন একাডেমীর জেটির পাশে বেজার প্রায় ২১ একর জমিতে গড়ে উঠা গাছ গুলো কাটার জন্য কর্ণফুলী ড্রাইডকের অনুমতি রয়েছে। এছাড়াও সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সহ সবধরণের কাগজপত্র তাদের রয়েছে।

ম্যানগ্রোভ বন কেটে উজাড় করে কর্ণফুলী ড্রাইডক

পরিদর্শন শেষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদী রক্ষা কমিশন হচ্ছে নদীর অভিভাবক। নদী তার নিজস্ব গতিতে চলবে, কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। নদী দখল করে যদি কেউ স্থাপনা, টার্মিনাল তৈরী করে বা নদী প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে নদী রক্ষা কমিশন তাদের বিরুদ্ধে মামলা সহ সব ধরণের আইনি ব্যবস্থা নিবে। নদীর তীরে গড়ে উঠা গাছ কেউ কাটতে পারবে না। যদি কাটতে হয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

 

 

কর্ণফুলী নদীসহ অন্যান্য খাল-বিল, জলাশয়-জলধারের দখল,দূষণ ও নব্যতা সরেজমিনে পরিদর্শন ও কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করবেন বলেও জানান তিনি।

 

এদিকে গত শনিবার সকাল থেকে কর্ণফুলী নদীর তীরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করার জন্য নদীর প্রায় ২১ একর চরে অর্ধকোটি টাকার ২ হাজার গাছ ম্যানগ্রোভ বন কেটে উজাড় করে কর্ণফুলী ড্রাইডক। ম্যানগ্রোভ বন কাটার ফলে একদিকে হুমকির মুখে পড়ছে কর্ণফুলী নদী অন্যদিকে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।

 

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর তীরে ১৯৭৫ সালের থেকে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা কেওড়া, ছৈলা ও বাইন গাছের ম্যানগ্রোভ বন তৈরী হয়। কয়েক বছর আগে কোরিয়ান ইপিজেড ম্যানগ্রোভ বনের প্রায় ৫০ একর জায়গার কয়েক হাজার গাছ কেটে নিজস্ব জেটি তৈরী করে। কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটি নির্মাণের জন্য মেরিন একাডেমীর জেটির পাশে বেজার প্রায় ২১ একর জমিতে গড়ে উঠা অর্ধ কোটি টাকার ২ হাজার গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরী করতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বদল পুরা এলাকার ২১ একর জায়গা নেয়। কিন্তু এই জায়গা তাদের কাছে ছোট হওয়ায় তারা জায়গাটিতে জেটি নির্মাণ থেকে বিরত থাকে। এরপর কর্ণফুলী ড্রাইডক বেজার কাছ থেকে নিয়ে নির্বিচারে এসব ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের গাছ কেটে কন্টেইনার টার্মিনাল তৈরীর কাজ শুরু করে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ টাকার গাছ কেটে ফেলেছে ওই ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। নির্বিচারে গাছ কেটে বন উজাড় ও নদী দখল করার ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী দের রোষানলে পড়ার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না ।

Related Articles

Back to top button