স্টাফ রিপোর্টার ,খাগড়াছড়ি :
আশ্বিন চলে যাচ্ছে। কার্তিক আসছে, বদলে যাচ্ছে ঋতু। হেমন্তকে স্বাগত জানাতেই পালিত হয় গারসি ব্রত। মূলত পূর্ববঙ্গীয়দের ব্রতানুষ্ঠান এটি। কোথাও কোথাও এটি গারু সংক্রান্তির ব্রত নামেও পরিচিত। আশ্বিন মাসের সংক্রান্তিতে এই ব্রত পালন করা হয়। একদা ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই এই ব্রত পালন করত। গ্রাম বাংলার মেয়ে ও বউরা কৃষিকাজে উন্নতি ও বিভিন্ন রকমের রোগ-ব্যাধি মুক্তির কামনায় এই ব্রতের প্রচলন হয়ে আসছে। আশ্বিন সংক্রান্তি আগের দিন অপরাহ্ন থেকে এই ব্রত শুরু হয়। ব্রতর প্রধান উদ্দেশ্য হেমন্তে মা লক্ষ্মীর আহ্বান করা। একই সঙ্গে মশা-মাছি, কীট পতঙ্গের হাত থেকে পরিবারকে রক্ষা করা। আশ্বিন সংক্রান্তির ভোরে অলক্ষ্মীকে বিদায় দিয়ে লক্ষ্মীকে আহ্বান করে বাড়ির মহিলারা।
আশ্বিনে রাঁধে,কার্তিকে খায়/যেই বর মাগে,সেই বর পায়’। সনাতন সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই প্রবচন। আশ্বিন সংক্রান্তির রাতে সারারাত জেগে বিশেষ খাবার তৈরি করেন বাড়ির নারীরা। এর মধ্যে অন্যতম গুড়মিশ্রিত নারিকেল। কার্তিকের সকালে সেই নারিকেল ও বাংলা কলা দিয়ে পূজায় নিবেদন করা পান্তা ভাত খাওয়া হয়।
কার্তিক এক সময় ছিল অভাবের মাস। সেই মাসের প্রথম দিনের সকালে সন্তানকে ভালোমন্দ খাইয়ে মায়েরা আশা করতেন- ‘পুরো বছরটা ভালো যাবে, সন্তান থাকবে দুধে ভাতে। ’
আশ্বিন মাসের শেষদিন ও কার্তিক মাসের প্রথম দিনকে ঘিরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত আছে এমন এক পার্বনের, যার নাম জলবিষুব সংক্রান্তি।
১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এই পার্বন উপলক্ষে খাগড়াছড়িতেও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা করছেন অশ্বিনী কুমারের ব্রত। এই ব্রত ‘ব্রতের ভাতের পূজা’ নামেও পরিচিত।
সনাতনী ইতিহাস মতে আরও জানা যায়, স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনী কুমারদ্বয় সূর্যদেব ও সংজ্ঞা’র পুত্র। অভিশাপগ্রস্ত সংজ্ঞা জগজ্জননী পার্বতীর কাছে নিজের দুর্দশা থেকে মুক্তি চাইলে পার্বতী এক মুষ্টি চাল দিয়ে তাকে বলেছিলেন-আশ্বিন মাসের শেষ তারিখ পূর্বরাত্রে শেষ দিবস রেখে এই চাল ভক্তিপূর্বক রন্ধন শেষে মহাদেবের অর্চনা করতে হবে এবং কার্তিক মাসের ১ম দিবসে সেই অন্ন ভক্ষণে মনস্কামনা পূর্ণ হবে।সে নিয়ম মেনে রোগ ও অভিশাপমুক্ত হয়েছিলেন দেবী সংজ্ঞা।
ধর্মীয় গুরু থেকে জানা যায়, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে উপবাস থেকে অশ্বিনীকুমারের ব্রত পালনের রেওয়াজ দেখা যায়। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার ব্রতের ভাত খাওয়ার ক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। ভক্তি সহকারে ব্রতের ভাত খাওয়ার ফলে রোগমুক্তি ও মনস্কামনা পূর্ণ হয়।