আত্ম সমর্পনের ২৪ বছরেও স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসা জেএসএস সদস্যদের মানবেতর জীবন যাপন
মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান অলি, খাগড়াছড়ি : রাজনৈতিক ও শান্তি পুর্ণ উপায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের আশায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। ১০ ফেব্রæয়ারী ১৯৯৮ সালে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম মাঠে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) অস্ত্র জমা দেন ১৯৪৭ জন জেল বন্ধীসহ ১৯৬৩ জন সদস্য স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসে। আজ সেই ঐতিহাসিক দিন।
শান্তি চুক্তির ২৪ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জে এস এস) আজ দুই ধারায় বিভক্ত। তাবই একটি অংশ খাগড়াছড়ি সদর শাখার জেএসএস (এমএন লারমা) সাধারণ সম্পাদক কালো বরণ চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর এবং তৎপরবর্তী চুক্তির কিছু ধারা বাস্তবায়নের ফলে জুম্মদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। তবে সরকার একটানা ১৩-১৪ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসা ১৯৬৩ জনের মধ্যে চাকরি পুর্ববহাল সহ ৭৫০ জনের ব্যবস্থা হলেও বাকী সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন ও নিরপত্তা হীনতায় শংকায় আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসা খাগড়াছড়ি সদরের সাগর চাকমা,কমলছড়ির রেমং মার্মা, আর্য মিত্র দেওয়ান,মংশি মারমা জানায়,এখন বৃদ্ধ বয়সে দিন মজুর। পানছড়ির হারুবিল বৌদ্ধ বিহারে পক্ষাঘাত অবস্থায় সুফল চাকমা সেবক হিসাবে কাজ করছেন। দীঘিনালার কবাখালী মতিন চাকমা, বোয়ালখালীর প্রীতিময় চাকমা প্যারালাইসিস হয়ে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে । প্রতিপক্ষের গুলি খেয়ে নিজ ভিটা রামগড় ছেড়ে কমেট ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি সদরে রিকসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে, মাটিরাঙ্গার কানেশ্বর ত্রিপুরা আর্থিক দৈনদশায় বর্তমানে ভিক্ষুক। মানিকছড়ি র মঙগং মারমা (সুমন) জানায় ৩০ বছর বয়সে অস্ত্র সমর্পন করে শান্তি চুক্তির ২৪ বছর পর এখনও আমি দিনমজুর । একই এলাকার সুপ্রিম চাকমা ভবঘুরে দিন যাপন করছে।
খাগড়াছড়ি জেলা জেএসএস (এমএন লারমা) এর সাধারন সম্পাদক সিন্ধু বিকাশ চাকমা (আয়তন বাবু) অভিযোগের সুরে দাবি করেন, চুক্তির ২৪ বছরেও পুরোপুরি শান্তি ফেরেনি পাহাড়ি জনপদে। পাহাড়ে এখনও গোলাগুলি, রক্তক্ষয়ী সংঘাত, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, খুন, গুম ও অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলছে। যার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মূল চুক্তির ১৯টি ধারায় বর্ণিত ৩৭টি মৌলিক বিষয়ের মধ্যে মাত্র ৪ টির পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে সরকার। আর ৯টি মৌলিক বিষয়ের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা কাজ এগিয়েছে। কিন্তু বাকি প্রায় ২৪ টির কোনও কাজই হয়নি। চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য আলাদা ভোটার তালিকা প্রণয়ন,আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের প্রবিধান দেওয়া,পার্বত্য পুলিশ বাহিনী গঠন ও ভুমি কমিশন বাস্তবায়নে রূপ দেওয়া হলে চুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়িত হতো।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দলের খাগড়াছড়ি জেলা জেএসএস (এমএন লারমা) এর সাধারন সম্পাদক সিন্ধু বিকাশ চাকমা (আয়তন বাবু) জানান, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কোনও নেতাকর্মী চুক্তি বাস্তবায়ন চায় না। যাদের অস্ত্রসর্মপনে সন্তু লারমা আজ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান তারাই আজ অবহেলিত হয়ে দিনমজুর ভবঘুরে। আশা করি শান্তির অগ্রদূত প্রধানমন্ত্রী অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসা লোকজনদের ভরসার হাত বাড়াবেন।