Breakingঅপরাধশীর্ষ সংবাদ

অস্ত্রধারীদের ছবি তোলা কাল হলো মুজাক্কিরের

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক , নোয়াখালী :
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশির হাট বাজারে আওয়ামী লীগের দু’গ্রপের সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির অস্ত্র ধারীদের ছবি তুলে ফেলায় চিহ্ন মুছতে ইচ্ছা কৃৃতভাবে তাকে গুলির নিশানা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন মুজাক্কিরের বড় ভাই নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মুজাক্কির গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁর মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস বলেন, ধারণা করা হচ্ছে গোলাগুলির সময় মুজাক্কির অস্ত্রধারীদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন। সেই বিষয়টি টের পেয়ে অস্ত্রধারীদের র্টাগেট হন মুজাক্কির। ময়নাতদন্তের পর কর্তব্যরত ডাক্তার জানিয়েছেন মুজাক্কিরের শরীর শটগানের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরে গুলির ৬২টি স্পিন্টার আঘাত করে। ঘটনাটি পরিকল্পিত না হলে মুজাক্কিরের শরীরে এতগুলো গুলি ডুকতো না।

এদিকে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যার ঘটনার পর এখনো কোন মামলা হয়নি। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি জায়েদুল হক রনি বলেন, মুজাক্কিরের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোন অভিযোগ করা হয়নি। তবে তার পরিবারের সাথে কথা হয়েছে, তারা আগামীকাল (মঙ্গলবার) অভিযোগ নিয়ে থানায় আসবেন।

এ ব্যাপারে মুজাক্কিরের বড় ভাই নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস বলেন, মামলার বিষয়ে আজ (সোববার) আমার ছোট ভাই ফখরুদ্দিন থানায় গিয়েছে, ওসি সাহেব থানায় ছিলেন না। বসুরহাটে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় তিনি ওই দিকে ব্যস্ত আছেন বলেন জানিয়েছেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালে আমাদেরকে থানায় যাওয়ার জন্য ওসি সাহেব বলেছেন।

অন্যদিকে, সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের রক্তাক্ত অবস্থার ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উপজেলার চাপ রাশির হাটে গুলিবিদ্ধ মুজাক্কিরের বাঁচার আর্তনাদ। রক্তাক্ত ওই সাংবাদিক ‘ভাই, আমাকে বাঁচান, প্লিজ আমাকে বাঁচান’ বলে আকুতি জানাচ্ছেন।

গত শুক্রবার বিকেলে চাপরাশিরহাট বাজারে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষে গোলাগুলির সময় মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও এটি। সেখানে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মোবাইলে আছে, আছে…।’ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যার ঘটনার ৭২ ঘন্টা পরও কোন মামলা না হওয়ায় এবং আসামী চিহিৃত না হওয়ায় জেলার সকল সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজ হতাশা ব্যক্ত করেছেন।


বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির মহাসচিব মনিরুজ্জামান চৌধুরী উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আমরা কোন দেশে আছি জানি না, যে দেশে সাগর-রুনির হত্যার বিচার হয় না। যে দেশে প্রকাশ্য গুলি করে মুজাক্কিরকে হত্যার করার ৭২ ঘন্টা পরও মামলা হয় না। আমরা বিচার চাইব কার কাছে ?

সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাব চত্তরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ রিপোটার্স ক্লাব নোয়াখালী জেলা শাখা ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম নোয়াখালী শাখা।


নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় জানান, ভিকটিমের পরিবার এখনও কোন মামলা না দেয়ায় তদন্ত শুরু করা যাচ্ছে না। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়ার সাথে সাথেই মামলা রেকর্ড করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত : বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল।

মিছিলটি বিকেল পাঁচটায় বাজারসংলগ্ন তার বাড়ি থেকে বের হয়ে চাপরাশিরহাট মধ্যম বাজারে গেলে কাদের মির্জার অনুসারীরা মিছিলে হামলা চালান। এ সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ দুই পক্ষকে দুই দিকে ধাওয়া করে এবং ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার শতাধিক অনুসারী মোটরসাইকেল ও গাড়িযোগে চাপরাশিরহাট এলাকায় যান। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্স ও গোলাগুলি শুরু হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। গুলিতে তার মুখের নিচের অংশ এবং গলা ঝাঁজরা হয়ে যায়। মুজাক্কির ছাড়াও গুলিবিদ্ধ অন্তত পাঁচ জন।


ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন আহতদের প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় নেওয়া হয় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে। রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় মুজাক্কিরকে। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুজাক্কিরের মৃত্যু হয়।

বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার ছাড়াও বার্তা বাজার ডটকমের নোয়াখালী প্রতিনিধি ছিলেন।

Related Articles

Back to top button