অবহেলিত জাবি শহীদ মিনার ভাষা দিবসে সুরক্ষিত
চেঙ্গী দর্পন ,জাবি প্রতিনিধি : রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ৫২র ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। আর ৭১ ফুট উচ্চতা নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহীদ মিনারের অবস্থান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বীকৃতি আর সম্মানের উদ্দেশ্যে শহীদ মিনার নির্মিত হলেও সেই মান রাখতে পারছে না মিনারটি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী এবং শিক্ষার্থীদের অসচেনতাকে অন্যতম কারণ বলা যায়। বাঙালির ইতিহাসের সাথে জড়িত এ স্থাপনার মর্যাদা এখন চোখে পড়ে একুশে ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রিক । শুধুমাত্র ভাষা দিবসের আগে ফুল দিতে শহীদ মিনার ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শহীদ মিনারের মূল বেদিতে পায়ে জুতা পরা অবস্থায় বসে গল্প-আড্ডা করছে একদল তরুণ-তরুণী। গল্পের সাথে সাথে তারা আইসক্রিম ও বাদাম খেয়ে সেখানেই খোসা ফেলছেন। একপর্যায়ে ছবি তুলে তারা সেখান থেকে বিদায় নিলেন । এরপর বাচ্চাসহ ছবি তুলতে মূল বেদিতে বসলেন ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা এক অতিথি। উপস্থিত মানুষদের দু-একজন পাশেই বসে ধুমপান করছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর শহীদ মিনারে কিছুটা কমতে শুরু করে জন সমাগম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের ভীড় নামে। এসময় জনসমাগমে পরিণত হয় শহীদ মিনার এলাকা। শহীদ মিনার এবং আশেপাশে বসে বিভিন্ন অস্থায়ী খাবার ও খেলনার দোকান। নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় এসময় শহীদ মিনারের মূল বেদিতে গিয়ে মানুষজন ছবি তুলে,আড্ডা দেয়,গানের আসর বসায়। তবে মূল বেদিতে জুতা নিয়ে ওঠা কিংবা না বসা নিয়ে মাঝে মাঝে সচেতন শিক্ষার্থীদের সাথে বাক-বিতন্ডা ও হয়। কেউ কেউ আবার শহীদ মিনারে পালন করেন জন্মদিনের অনুষ্ঠান। অধিকাংশ সময় রাতে বসে গাঁজার আসর। নিরাপত্তার জন্য লাইটের ব্যবস্থা থাকলেও অনেক সময় তা নষ্ট করে দেয় মাদকসেবীরা। তবে এসব বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোন তৎপরতা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন। মাঝে মাঝে দেখা যায় সামাজিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিজ উদ্যোগে শহীদ মিনারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে।
শহীদ মিনারের ভাবমূর্তি এবং মর্যাদা ক্ষুন্নের ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দিপংকর চক্রবর্তী দিপ বলেন, এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যেমন দায় আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও দায়িত্বের অবহেলা আছে। আমরা যখন বিভিন্ন সময় মানুষকে বলতে যাই শহীদ মিনারে জুতা নিয়ে উঠবেন না কিন্তু শহীদ মিনারে এত পরিমাণ ময়লা তারা জুতা ছাড়া কিভাবে উঠবে? এ প্রশ্নের জবাব তো আমরা তাদের দিতে পারি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ শাখার পরিচালক মো.আব্দুর রহমান সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব জন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদের নিজ উদ্যোগ ও সচেতনতার বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, দেশের সর্বোচ্চ শহীদ মিনারটি ২০০৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান উদ্বোধন করেন। ৭১ ফুট উচ্চতা ও ৫২ ফুট ব্যাসের এই শহীদ মিনারের স্থপতি রবিউল হুসাইন। আটটি সিঁড়ির উপর ত্রিভুজা কৃতির তিনটি স্তম্ভ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ মিনারটি।