চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক,পানছড়ি, খাগড়াছড়ি : বিঝুর আগাম বার্তা নিয়ে প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মে এ বছরও পাহাড় জুড়ে ফুটেছে ‘বিঝু ফুল’। এ ফুলগুলো ফুটলে পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতীয়দের মনে ‘বৈসাবী’-র আনন্দে মন দোলা দেয়। আর বাংলা নববর্ষের আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
বয়োজেষ্ঠদের সাথে কথা বলে জানা যায় ,বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতীদের প্রধান উৎস ‘বৈ-সা-বী”। বৈসাবীতে পাহাড়ী এই ফুল দিয়ে গোসল,ঘর সাজানো, পুজা-প্রার্থনা সকল কাজে ব্যবহার হয় বলে বিঝুফুল বলা হয়। তবে সম্প্রদায় ভেদে এফুল বিভিন্ন নামে পরিচিত। পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালী সম্প্রদায়েরা এ ফুলকে বলে ‘ভিউফুল’। চাকমা সম্প্রদায়ের ‘ভাতজোড়া’, ত্রিপুরা সম্প্রদায় ‘কুমুইবোবা,মার্মা সম্প্রদায় ‘চাইগ্রাইটেং’ , সাওতাল স¤প্রদায়েরা ‘পাতাবাহা’ ফুল বলেই চিনে। বিঝু ফুলের রক্ষায় কেউ বাগান না করলেও চৈত্র মাসে জঙ্গলে বেড়াতে গেলেই এ ফুলগুলোর দেখা মিলে। পাহাড়ে এখন আগের মতো গাছ-বাঁশ না থাকায় এখন আগের মতো ‘বিঝু ফুল’ পাওয়া যায় না।
‘ফুল বিঝু’ দিনে ‘বিঝু’ ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হলেই ‘বিঝু’র পরিপূর্ণতা পায়। তাই ‘ফুল বিঝু’র দিনে ‘বিঝু’ ফুল দিয়ে পাহাড়ীরা পুরো ঘর সাজিয়ে রাখে। তবে ‘বিঝু’ ফুল না পেলে অন্যান্য ফুল দিয়েও ঘর সাজানো হয়।
পানছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বকুল চন্দ্র চাকমা অতীতের সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, শিশু-কিশোর বয়সে ফুল বিঝু দিনে ফুল সংগ্রহের জন্য খুব ভোরে জঙ্গলে যেতাম। বিঝু ফুল দিয়ে পুরো ঘর সাজিয়ে রাখতাম। কিশোর-কিশোরীরা ফুল দিয়ে মালা গেঁথে হাতে-গলায় পড়তো। শুনেছি,ভাত ফুলের মালা গায়ে দিলে অনেক রোগ-ব্যধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এখনতো আর সেই দিন নেই। মানুষ এখন বিঝু নিয়ে আনন্দÑফুর্তি কম করে। কারণ বিঝু সময় আসতে না আসতেই পাহাড়ে স¤প্রীতি নষ্ট হয়।
প্রাক্তন শিক্ষক নকুল রঞ্জন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে বৃক্ষশুন্য হওয়ার কারনে এখন আর আগের মতো ‘বিঝু ফুল’ পাওয়া যায় না। অব্যাহত বন উজার আর পাহাড় কাটার ফলে ভবিয্যতে এ ফুল পাওয়া কষ্ট সাধ্য হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এ ফুলগুলো চিনবেও না। ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য এ ফুল সংরক্ষন করা প্রয়োজন।