পাহাড়ে ড্রাগন চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে উঠেছেন অনেকে
স্টাফ রিপোর্টার , খাগড়াছড়ি :
পার্বত্য খাগড়াছড়ির জনপদে বিদেশি ফল ড্রাগনের চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে উঠেছেন অনেকে।
পানছড়ি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৫টি ড্রাগন বাগান ছাড়াও বাড়ীর আশপাশ ১৫ -২০টি করে চারা লাগিয়ে অনেকেই ড্রাগন চাষ করেছেন সরজমিনে এমনই দেখা যায়। তন্মধ্যে শান্তিপুর অরন্য কুটিরের ৮০ শতাংশ জায়গায় ৫০০ পাকা পিলারে টায়ারের রিং ব্যবহার করে প্রায় আড়াই হাজার ড্রাগন ফলের চারা লাগিয়ে সফলতাও পেয়েছেন চাষী চন্দন ভান্তে । ২০১৮ সালে তিনিই প্রথম পরীক্ষা মুলক পাহাড়ে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আবার টায়ারের পরিবর্তে পাইপ পদ্ধতিতে ড্রাগন গাছ লাগিয়েছেন বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুপ দত্ত তালুকদার। এতে জায়গার ব্যবহার যেমন শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে, তেমনি বেড়েছে গাছের সংখ্যা। এতে উৎপাদনও বাড়ছে। শান্তি পুর পৈত্বিক ভিটায় মাত্র ৩০ শতক জমিতে ১ হাজার ড্রাগন গাছ লাগিয়ে তিনি আগামীতে অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার আশা করছেন। তিনি প্রতি বছরে ৪ সিজনে সব মিলিয়ে তিন চার রাখ টাকা আয় করতে পারছেন।
ড্রাগন ফল চাষী চেঙ্গী ইউনিয়নের সাওন চাকমা ও কানুনগো পাড়ার জোতিন্দ্র চাকমা জানান,তিন বছরের ব্যবধানে তিনটি মৌসুমে বাগানের ড্রাগন ফল বিক্রি করে আয় করেছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। স্বল্প সময়ে অধিক লাভ জনক হওয়ায় পাহাড়ে সম্ভাবনাময় বিদেশি ফল ড্রাগনের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চাষীরা। পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে ইতিমধ্যে ব্যাপক সারা মিলেছে।এছাড়াও ড্রাগন ফলের সাথে মিশ্র ফল চাষ করা যায়। পেপে, পেয়ারা , মালটা ছাড়াও নিচে মওসুম অনুযায়ী সব্জি চাষ করা যায়।
সন্ধ্যায় এলইডি বাতি জ্বালিয়ে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে অমৌসুমেও দিব্যি ড্রাগন ফল উৎপাদন করেন শিক্ষক ও ড্রাগন ফল চাষি অনুপ দত্ত তালুকদার। তার বাগানের প্রতিটি গাছই খুব সজীব। একই গাছে ফুল, কুঁড়ি, ফল আছে। অর্থাৎ একটি গাছ থেকেই ধারাবাহিকভাবে ফল পাওয়া যাবে একের পর এক। তিনি বলেন, প্রতিটি গাছ থেকেই সারাব ছর ফল পাওয়া সম্ভব, এমন কি শীতকালেও ফলবে। কৌশল বুঝে করলে চাষ, ফলবে ড্রাগন বারো মাস। বছরে কয়বার ফল পাওয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে অনুপ দত্ত তালুকদার বলেন, শীত মওসুমে এলইডি বাতি ব্যবহার করলে ,প্রায় সারা বছরেই ড্রাগনের ফলন অব্যাহত থাকে। ১৫ দিন পরপর ফল তোলা যায়।
পানছড়ি উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত চৌধুরী বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষে উপযোগী। অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে নতুন নতুন ফল-ফসল খুব দ্রুত গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। সময়ের প্রয়োজনেই কৃষি ক্ষেত্রে আসছে বহুমুখী বৈচিত্র্য। পৃথিবীর একপ্রান্তের ফল-ফসল চলে যাচ্ছে আরেক প্রান্তে। পাহাড়ের শৌখিন ও উদ্যোগী কৃষকদের হাত ধরে পুষ্টিকর, আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু নানা ফল-ফসলের বাণিজ্যিক উৎপাদন চলছে। এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আম,মাল্টা, পেয়ারা ,পেপে, ড্রাগন ফল। পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, ফলনশীলতা, বাজারমূল্য বুঝে উদ্যোক্তা কৃষক ঝুঁকছেন বিভিন্ন ফল ফলাদির বাণিজ্যিক উৎপাদনে। পাহাড়ে এখন কমবেশি ড্রাগন উৎপাদন হচ্ছে। এখন যে কোনো ফল বাজারে বা রাস্তাঘাটেও বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজারে দুস্প্রাপ্য ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে বাজারে। অথচ একটা সময় সুপার শপ গুলোয় উচ্চদামে বিক্রি হতো বিদেশ থেকে আমদানি করা এই ড্রাগন ফল।