নিজস্ব প্রতিনিধি : মুখে দাঁড়ি, কাধে ব্যাগ ও গলায় ঝুলানো সাংবাদিক আইডি কার্ড সাথে ইয়া লম্বা ক্যামেরা। একাধিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক তিনি। সব সময় ৩ হাজার সম্পাদক তার পকেটেই থাকে। এদেরকে ফোন দিলে যে কাউকে সাংবাদিক বানানো কোন ব্যাপারই না। এমনই সব কথা বলে বেড়ান গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মুনশুরপুর গ্রামের কথিত সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আমিন।
রোববার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে কথিত ওই সাংবাদিক খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে যান। সেখানে তিনি নিজেকে একাধীক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক এবং ঢাকা প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য পরিচয় দেন। খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে গিয়ে তিনি তার জেলা প্রতিনিধিকে কেন ওই প্রেস ক্লাবের সদস্য করা হচ্ছেনা এ ব্যাপারে ক্লাবের কর্মকর্তাদের কাছে জবাব চান। সেখান থেকে কথিত ওই সাংবাদিক খাগড়াছড়ির সাংবাদিকদের রোশানল থেকে কৌশলে কেটে পড়েন। পরে বিষয়টি নিয়ে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য ও বাংলাভিশনের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি এইচএম প্রফুল্ল তার ফেসবুক ওয়ালে কথিত ওই সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আমিনের ভিজিটিং কার্ড ও সিসি টিভি ফুটেজসহ একটি স্ট্যাটাস দেন। যাতে নীতিবাচক অসংখ্য মন্তব্যের ছড়াছড়ি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, কথিত সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আমিনের সংসার চলতো অনেক কষ্টে। সংসারের খরচ যোগাতে কয়েকদিন আগেও সে রাজ যোগালীর কাজ করতো। প্রাইমারীর গন্ডিও পার করতে পারেনি। কিন্তু সে কি এমন আলাদিনের চেরাগ পেলেন, যে রাতারাতি এত বড় মাপের সাংবাদিক হয়ে গেলেন? এমন প্রশ্ন অনেকের। ৫শ টাকায় বিক্রি করেন সাংবাদিকতার আইডি কার্ড। কথিত ওই সাংবাদিকের ডাকে সাড়া দিয়ে স্থানীয় অনেকেই এখন সাংবাদিক।
সূত্র আরো জানান, সে নিজেকে একাধিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক পরিচয়ে ইতিমধ্যে নিজের গ্রামের নামসহ স্থানীয়ভাবে গঠন করেছে একাধীক সাংবাদিক সংগঠন। গড়ে তুলেছে হলুদ সাংবাদিকতার একটি চক্র। তার চক্রের সাংবাদিক হওয়া থেকে বাদ যায়নি মসজিদের ইমাম, ফার্মেসী ব্যবসায়ী, বিকাশ ইজেন্ট, মুদি দোকানী, মাদক কারবারী, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী, দাদন ব্যবসায়ী, জমির দালাল, পুলিশের সোর্স, হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী, প্রবাসী, হকার, কবিরাজ, বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিও। তবে সাধারণের কাছে ওরা অনেক বড় সাংবাদিক। তাই ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পায় না। আর স্থানীয় মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীরা নিজেদের আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করে তারাও কিছু না বলে এড়িয়ে গে
ছেন সবসময়। তারা অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে গেছেন হলুদ সাংবাদিকতার কাছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় মূলধারার কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সাথে। ওই চক্রের কারণে অনেক জায়গায় গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে এখন আর নিজেকে পরিচয় দেন না তারা। এই পরিচয় দিলে মহান পেশাটি নিয়ে অনেকের কাছ থেকেই নীতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়। বর্তমানে স্থানীয় হলুদ সাংবাদিকদের কাছে অনেকটা কোনঠাসা হয়েই পড়েছেন তারা।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক জানান, ফেসবুকের ওই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হওয়ার সুবাদে দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে এতে করে অন্য একটি জেলায় নিজের জেলা ও উপজেলাকে খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করা হলো। এই ধরণের হলুদ সাংবাদিকদের কারণে অনেক জায়গায় মূলধারার সাংবাদিকরা আজ কোনঠাসা।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, স্ট্যাটাসটি আমি দেখেছি। সাংবাদিকতাকে বলা হয় রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ, যাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। কিন্তু আজকে কিছু নামধারী সাংবাদিক মহান পেশাটিকে কুলষিত করছে। তবে এ নিয়ে আমাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিত।