আমরা চাকরী করি ছোট কিন্তু দায়িত্ব বড়
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত গত বছরের মার্চেই বন্ধ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার্থীরা সহ শিক্ষক,কর্মকর্তা,কর্মচারীদের অনেকেই ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
এতে পাল্টে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক দিনের চিত্র। তার মধ্যে করোনার প্রথম ধাপে ক্যাম্পাসে লকডাউন দিলে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তৈরি হয় এক ভুতূড়ে পরিবেশ। এসবের মধ্যেও দায়িত্বে সদা তৎপর ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী সহ চিকিৎসা কেন্দ্রের সদস্যরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার প্রথম থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা । সে সময়ে যেখানে সারা ক্যাম্পাসে কদাচিৎ দেখা মেলত জন মানবের। এর মধ্যে কেউ কেউ করোনায়ও আক্রান্ত হয়েছেন। আবার সুস্থ হয়ে ফিরেছেন কর্মস্থলে। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রেরৃৃৃৃ এক কর্মচারী।
এসবের মধ্যেও মহামারীর মত ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে প্রথম থেকে দায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্ববোধ করেন বলে জানান তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক সদস্য জানান, করোনার মধ্যে আমরা কোন ছুটি কাটাইনি,বরং আমাদরে মধ্যে কয়েক জন করোনায় আক্রান্ত হবার কারণে জনবল সংকট তৈরি হয়েছিল। যার দরুণ ক্যাম্পাসে এক ধরণের অজানা ভীতি তৈরি হয়েছিল। ফলে ক্যাম্পাস পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যায়। বাড়ীতে চলে যাওয়ার জন্য পরিবারও কান্নাকাটি করেছিল কিন্তু দায়িত্বের কারণে যেতে পারিনি।
নিরাপত্তা শাখার পরিদর্শক (গ্রেড ১) দাউদ মোল্লা বলেন, ‘নিরাপত্তার দায়িত্বে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থায়ী ও ডেইলি বেসিসে ৯৪ জন নিরাপত্তারক্ষী কর্মরত আছে। করোনা আক্রান্তের কথা চিন্তা না করে তারা সর্বদা সজাগ থেকেছেন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায়। তিনি আরও বলেন আমি সহ আমাদের সেকশনের শামছুল হক ও বাবুল শেখ নামে মোট ৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেক দিন অসুস্থ থেকেছি। সুস্থ হয়ে আবার দায়িত্ব পালন করছি। আমরা চাকরী করি ছোট কিন্তু দায়িত্ব বড়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে জানা যায়,করোনার মধ্যে চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রথমদিকে যেসব সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়েছে তা ছিল খুবই অপ্রতুল। কিন্তু করোনায় দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিদিনই প্রয়োজন হচ্ছে এসব নিারপত্তা সামগ্রী।পরবর্তী সময়ে পি পি ই,মাস্ক, স্যানিটাইজার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ডাক্তাররা নিজেরা সুরক্ষা সামগ্রী কিনে ব্যবহার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের নার্স মাহমুদা পারভীন সুমি, ক্লিনার নীপা বিশ্বাস, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নাইমুল হাসান, কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইয়াকুব আলী সহ একজন ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে কম্পিউটার অপারেটর ইয়াকুর আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। চিকিৎসা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে করোনার মধ্যে রোগীদের সেবা অব্যাহত রাখতে ডাক্তারদের চেম্বারে নিজেদের অর্থায়নে গ্লাস দ্বারা বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে।
করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসাকেন্দ্রের ডাক্তার,কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং করোনায় মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীর বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের উপদেষ্টা কমিটির প্রধান অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোন আলাপ আলোচনা হয়নি,তবে আমরা এ বিষয়ে অবগত আছি। করোনার যারা যারা কাজ করেছে তাদের ওভারটাইম বা অন্যান্য বিয়য়ে একটি কমিটি হয়েছে। কমিটিতেই এসব আলোচনা হবে।’
ইয়াকুব আলীর পরিবারের সাথে আলাপ করে জানা যায়,পরিবারেরএকমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে ছেলেমেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছেন। অনেকে সাহায্যের আশ্বাস দিলেও কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘করোনায় যারা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে আমরা তাদের বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছি, তবে সরকার থেকে তো এখনও কিছু পাইনি,তার অপেক্ষা করছি। তারপর ও আমরা নিজের থেকে তাদের কিছ সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টা চিন্তা ভাবনার পর্যায়ে আছে। যেহেতু তাদের সংখ্যাটাও অনেক। করোনার সময়ে নিরাপত্তা শাখা ,এষ্টেট অফিস, নিরাপত্তা শাখা ,ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস, মেডিকেল, রেজিষ্ট্রার অফিস সহ জুরুরী সেক্টরগুলো তাদের সেবা দিয়েছে এবং শিক্ষকদের মধ্যেও দায়িত্ব পালন করেছে। তবে যাই হোক তাদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করা হবে।