আনোয়ারায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তি জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়নের বাথুয়াপাড়া এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শুধীরঞ্জন দাশের পরিবারের সম্পত্তি জাল-জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে আদালতে চলছে মামলা। সম্প্রতি গত ৬ এপ্রিল পরিবারটির একটি পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে ২ লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধনেরও থানায় অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছে আনোয়ারা থানার সহকারি পুলিশ পরিদর্শক আরাফত হোসেন।
তিনি বলেন, পরৈকোড়া ইউনিয়নের বাথুয়াপাড়া গ্রামে প্রবাস কান্তি দাশ ও সুব্রত রঞ্জন সিকদারের জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে গত সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দু’পক্ষেই জায়গাটি নিজেদের দাবী করছে। যেহেতু বিষয়টি দলিল সংক্রান্ত তাই আদালতেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত করতে হবে।
আনোয়ারা থানা ও আদালতের মামলার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়নের বাথুয়াপাড়া গ্রামের স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগ্রামে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শুধীরঞ্জন দাশের বিধাব স্ত্রী ছায়া রাণী দাশের (৭৫) কাছ থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী সুব্রত রঞ্জন সিকদার (৫৭) নামে এক ব্যাক্তি পুকুরে মাছ চাষ করার চুক্তির কথা বলে ১৯৯৯ সালে কয়েকটি স্টাম্পে জাল-জালিয়াতি করে স্বাক্ষর নিয়ে ছায়া রাণী দাশের ৩৯ শতকের একটি পুকুর দখলে নেয়। পরে তার একমাত্র ছেলে সুব্রত রঞ্জন আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারে ২১৬০নং দলিল মূলে পুকুরটি সুব্রত রঞ্জন সিকদার ক্রয় করেছে বলে দাবী করে। এসব ঘটনায় একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মান্যগণ্য ব্যক্তি দের নিয়ে সামাজিক বৈঠকও হয়। কিন্তু মিলেনি কোনো প্রতিকার। বৃদ্ধা ছায়া রাণী দাশ বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত মামলা তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মো. আবু হানিফ সুব্রত রঞ্জন সিকদার শিবুকে দলিলের মূল কপিসহ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারী পিবিআই খুলশী চট্টগ্রাম অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি হাজির হননি। এবিষয়ে পিবিআই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনও পেশ করেন।
শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শুধীর রঞ্জন দাশের স্ত্রী ছায়া রাণী দাশ জানান, আমার স্বামীর ভাগিনা সুব্রত রঞ্জন সিকদার দীর্ঘ ২০ বছর আগে আমাকে শহরে তার বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যান। আমিও সরল মনে যায় বেড়াতে। সেখানে বেশ কয়েক দিন থাকার পর একদিন রাতে আমাকে সে বলে আমার পুকুরে নাকি সে মাছ চাষ করতে চাই। সে জন্য কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে। আমিও আপন মনে করে স্বাক্ষর করি। কয়েক বছর পরে জানতে পারি আমার কেনা সম্পত্তি ও পুকুর নাকি তার। আমি নাকি তার কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। আমার ছেলে ও আমাকে পুকুরে যেতে দিচ্ছে না। আমরা যদি জমি ও পুকুর দাবী করি তাহলে আমাদের প্রাণে মেরে পেলবে সে ও তার সন্ত্রাসী বাহানীরা। আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার স্বামী যে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে আর সে দেশে আমাদের ঠাঁই নাই। আমি প্রধানমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।
সম্প্রতি গত ৬ এপ্রিল বিরোধপূণ্য পুকুরে রাতের আধাঁরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করলে ছায়া রাণী দাশের পুত্র প্রবাস কান্তি দাশ বাদী হয়ে আবারো একটি সুব্রত রঞ্জন সিকদার ও স্থানীয় তার সহযোগিদের অভিযুক্ত করে আনোয়ারা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ গত মঙ্গলবার দুপুরে অভিযোগটি তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয় প্রবাস কান্তি দাশ বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে আমার পিতা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিতে মীরসরাই গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। এটা আমার মায়ের কিনা সম্পত্তি। সে প্রভাবশালী ব্যাক্তি আমার মাকে ভাতের দাওয়ার দিয়ে জাল-জালিয়াতি করে লিখে নিয়েছে সম্পত্তি, তা আমার মা বুঝতে পারেনি। আমিও কয়েক বছর পর জানতে পারি যখন সে স্থানীয় বাহিনীদের নিয়ে দখল করে রেখেছে। আমরা এটার দাবী করলে নাকি প্রাণে মেরে ফেলবে। আমি ভূমিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ভূমিদস্যুর কাছ থেকে আমরা মুক্তি চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সুব্রত রঞ্জন সিকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার চেস্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম দিদারুল ইসলাম বলেন, এঘনায় থানায় একটি অভিযোগ করেছে প্রবাস কান্তি দাশ নামে এক ব্যাক্তি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।