চট্টগ্রামে ১৫০ শয্যার বার্ন হাসপাতালের নির্মান স্থান পরিদর্শন
চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ক্যাম্পাসের গোঁয়াছি বাগান এলাকার প্রায় এক একর জমিতে নির্মিত হবে ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত এই বার্ন হাসপাতাল। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এর নির্মান কাজ শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২রা নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার চীন সরকারের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতাল এলাকায় পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভূ-তাত্তি¡ক জরিপ শেষ হয়েছে। চলতি মাসেই আনা হবে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র। দলটি এখান থেকে ফিরে গিয়ে বার্ন ইউনিটের বিষয়ে প্রতিবেদন নিজ সরকারের কাছে দেবে। সব ধরনের কাগজপত্রের কাজ শেষ হওয়ার পর ভৌত অবকাঠামোগত কাজে নামবেন তারা।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা ডা. সামন্ত লাল সেন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প এ বার্ন ইউনিট। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে জরুরি মিটিং আছে। যত দ্রুত এ হাসপাতালের কাজ শুরু করা যায়। দুই থেকে তিন মাসের মতো লাগবে শুরু করতে। ইতিমধ্যে তারা (চীন) তাদের ইকুয়েপমেন্ট-ফার্নিচার এসব নিয়ে আসবে। কাজ শুরুর ২২ মাসের মধ্যে হাসপাতাল তৈরি হবে। আশা করছি দেড় বছরের মধ্যে ভালো কিছু হবে।
তিনি আরোও বলেন, চট্টগ্রামে অনেক বার্নের রোগী আছে যাদের আইসিইউ প্রয়োজন হয়, কিন্তু তা দিতে পারি না। তাই অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। এ ইউনিটটি চালু হলে রোগীরা মানসম্মত চিকিৎসা পাবে। চুক্তির ২২ মাসের মধ্যে হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ হলে সেই হিসাবে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু করতে পারবে ।
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান বলেন, হাসপাতাল ভবন, যন্ত্রপাতি-সব চীন দিবে। তবে জনবল আমাদের দিতে হবে। সে অনুযায়ী জনবল কত লাগবে তা পর্যালোচনা করে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করা হয়েছে। এটি অনুমোদন হলে আশা করছি কাজ শুরু করতে পারবো। আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা (চীন) যাবতীয় কাজ শেষ করবে। তারা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে কাজ শুরু করতে চাচ্ছে।
চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য এ বার্ন ইউনিটটি হবে ৬ তলা বিশিষ্ট। ১৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং ৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা। ছয়তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, ২য় তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), ৩য় তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ৪র্থ এবং ৫ম তলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ৬ষ্ঠ তলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬টি শয্যা নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করে চমেক। এটিকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বলা হলেও এর অস্তিত্ব নেই হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে। এমনকি নেই অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এরপরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও হাসপাতাল নিমার্ণের আটকে ছিল স্থান নির্বাচনেই। শেষ মেষ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির জন্য চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছি বাগান এলাকায় স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের জানায় চীন সরকার। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।