স্টাফ রিপোর্টার , নোয়াখালী :
মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড। সেই মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি খাবার হিসেবে খাচ্ছে মাছ। মাছে মিশছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের মতো বিষাক্ত উপাদান। এসব মাছ খেয়ে মানব দেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে মুরগির বিষ্ঠায় পানিতে জীবানু ছড়িয়ে দোষিত হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে রোগ-জীবানু। খামারীদের মাঝে সচেতনতা তৈরীর মাধ্যমে এ থেকে পরিত্রান চায় স্থানীয়রা।
১০ অক্টোবর হতে ১৩ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত সরেজমিন নোয়াখালীর সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ সহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রাণী সম্পদ বিভাগের উদাসীনতায় পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠার নীতিমালা ভঙ্গ করে মৎস্য খামারের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচ শতাধিক পোল্ট্রি খামার। আর সেই পোল্ট্রি খামারের মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি খাবার হিসেবে খাচ্ছে মাছ। এছাড়াও মুরগির বিষ্ঠা পানিতে পড়ে দূষিত হচ্ছে পানি। মাছে মিশছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের মতো বিষাক্ত উপাদান। এসব ক্ষতিকর মাছ স্থানীয় বাজার সহ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব মাছ খেয়ে তৈরি হচ্ছে দূরারোগ্য , মানব দেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ও নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
মৎস্য খামার ও মুরগির শেডের মালিকরা বলেন, এভাবে মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড দিয়ে চাষ করলে কম খরচের বেশি মাছ উৎপাদন হয় তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই অঞ্চলে এভাবেই মুরগির শেডের নিচে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর কিংবা মৎস্য বিভাগ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা বা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।
জেলার সচেতন মহল বলছেন, পোল্ট্রি খামারের নিচে সমন্বিত মাছ চাষের ফলে পানিতে মুরগির বিষ্ঠা পড়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-জীবানু। অন্যদিকে মুরগির বিষ্ঠা খাবার হিসেবে ব্যবহার করে উৎপাদিত মাছ খেয়ে মানব দেহে দেখা দিচ্ছে নানা জটিল ও কঠিন রোগ। এসব রোগ বালাই থেকে মানুষকে রক্ষা করতে খামারিদের মাঝে সচেতনতা তৈরী করে পোল্ট্রি শেডের নিচে মাচ চাষ বন্ধ করার আহবান জানান তারা।
ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সমিতি নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম বলেন, মৎস্য বিভাগ থেকে এই ধরনের সমন্বিত খামারের তালিকা প্রস্তুতের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির নির্দেশ পেয়ে আমরা নিদের্শনা বাস্তবায়নে কাজ করছি। প্রাণী সম্পদ বিভাগ সহযোগিতা করলে এই ধরনের খামার ব্যবস্থাপনা রোধ করা সম্ভব হবে।
এফপিএবি নোয়াখালীর প্রোগ্রাম অফিসার ডাক্তার মো. নুরুল আলম লিটন বলেন, বয়লার মুরগিকে বাজার থেকে যেসব খাবার খাওয়ানো হচ্ছে, তাতে বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল থাকে। যা মুরগির বিষ্ঠার মাধ্যমে সরাসরি জলাশয়ের মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে। সেই মাছ আমরা মানুষ খাচ্ছি এবং এই খাওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ক্যামিকেল আমাদের দেহে প্রবেশ করছে। এতে দেখা যায় আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ-পতঙ্গের ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘদিন এই ধরনের মাছ গ্রহন করার ফলে আস্তে আস্তে আমাদের লিভার, কিডনি সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-পতঙ্গগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে মা, শিশু ও বয়স্করা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এই সরাসরি মুরগির বিষ্ঠায় মাছ উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, পোল্ট্রি খামার নীতিমালা অনুসারে কোন জলাশয়ে কিংবা জন বসবাসপূর্ণ স্থানে পোল্ট্রি খামার স্থাপনের সুযোগ নাই। নোয়াখালীতে যেসব এলাকায় এ ধরনের খামার করেছেন, তা সম্পন্ন বিধি বর্হিভূতভাবে করেছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা তালিকা প্রণয়ন করে খামারিদের সচেতন করবো এবং এই ধরনের খামার ব্যবস্থাপনা বন্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিক বার ফোনে কথা বললে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত কর্মকর্তা ডা. গৌতম দাস।
সাম্প্রতিক খাদ্য মন্ত্রী সাদন চন্দ্র মজুমদার নোয়াখালী সফরে এসে পোল্ট্রি খামারের নিচে মৎস্য চাষের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই ধরনের খামার ব্যবস্থাপনা বন্দের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। পোল্ট্রি খামারের নিচে মাছ চাষ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে প্রশাসন এমনটাই প্রত্যাশা নোয়াখালীবাসীর।