Breakingঅপরাধচট্টগ্রাম অঞ্চলসারাদেশ

নোয়াখালীতে সাধ্যের বাহিরে মাছ-মাংস ও সব্জি বাজার

চেঙ্গী দর্পন , স্টাফ রিপোর্টার ,নোয়াখালী :
পবিত্র মাহে রমজান ঘিরে প্রতিবছর দেশের পাইকারি-খুচরা সব বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ে। রাজধানীর পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয় স্থানীয় বাজারগুলোতেও। প্রতিবছরের ন্যায় বাজার পরিস্থিতি এবারও ব্যতিক্রম নয়। রমজানের শুরুতেই নোয়াখালীর বিভিন্ন বাজারে বেড়েছে বেগুন, শসা, টমেটো, গাজর, লেবুসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম। চড়া দামের মাছের দাম আরও চড়েছে। এখন শাক-সবজির মৌসুম হলেও বাজারে কাঁচামালের দাম এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্তি বিরাজ করছে।বাজারে মাছ, শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

 

শুক্রবার (২৪ মার্চ) জেলার পৌরবাজার, দত্তেরহাট, সোনাপুর, মাইজদী বাজার ও চৌমুহনীসহ আশেপাশের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুনের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শশা ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও লেবু ২০ থেকে ২৫ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। রমজানে এসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গোল বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম কমেছে কাঁচামরিচের। ১২০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ সপ্তাহের ব্যবধানে কমে ৮০ টাকায় নেমেছে।

জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চাষি আবির হোসেন বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে প্রতি হালি লেবু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছি। রমজান উপলক্ষে আমরা দাম বাড়াইনি। তবে আমাদের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার পর ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে প্রতি হালি লেবু ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।

 

সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের কৃষক হাছান বলেন, প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

একই এলাকার বরকত উল্যাহ বলেন, আমরা ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি মরিচ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর খুচরা বিক্রেতারা কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দাম নিচ্ছেন।

পৌরবাজারের ব্যবসায়ী সুমন বলেন, পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম না বাড়লেও রমজানে চাহিদা বাড়ায় বাজারে দাম চড়া। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম কেজিপ্রতি গড়ে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

মান্নান নগরের সবজি বিক্রেতা কফিল উদ্দিন বলেন, রমজান উপলক্ষে কিছুটা দাম বেড়েছে। যা কয়েকদিন আগেও বেশ কম ছিল। রমজানের কারণে বাজারে কাঁচাপণ্যের চাহিদা বেড়েছে, এ কারণে দামও কিছুটা বাড়তি।

জেলা শহরের পৌরবাজারের সবজি বিক্রেতা আজগর হোসেন বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের চাহিদা বেশি। রোজার শুরুতে বাজার চড়া থাকা স্বাভাবিক। তবে খুব বেশি দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কদিন পরে দাম আবার স্বাভাবিক হতে পারে।

পৌরবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। বাজারে এলেই শুনি এটার দাম ওটার দাম বাড়তি। কোনোকিছুর দাম কমতে শুনি না। যেটাতেই হাত দেই সেটার দাম ই বেড়ে যায়।

একই বাজারে বাজার করতে আসা সোহেল বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচাবাজারের সবজি থেকে শুরু করে প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও রমজান ঘিরে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো পণ্যের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে।

এদিকে মাছের দাম আগে থেকেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। রমজান শুরুতে এ দাম আরও বেড়েছে। বাজারে রুই মাছের কেজি ৪২০ টাকা, চিংড়ি এক হাজার টাকা, বড় সাইজের কাতল ৪৫০ টাকা, ইলিশ মাছ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা, শোল ৮০০ টাকা, গøাস কার্প ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, দেশি কৈ মাছ ১ হাজার টাকা, চাষের কৈ ২৫০-৩০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

মাছ কিনতে বাজারে আসা হান্নান সরকার নামে এক ক্রেতা বলেন, রমজান উপলক্ষে প্রতিটি পণ্যের পাশাপাশি মাছের দামও বেড়েছে। সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পযন্ত বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ অবস্থা কাটাতে যথাযথ বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তিনি।

কোন অসাধু ব্যবসায়ী যাতে সিন্ডিকেট করে বাজারের দাম না বাড়ায় সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারগুলোতে যথাযথ তদারকি করবে বলে জানান সংগঠনটির নোয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাওছার মিয়া। তিনি বলেন, রমজানের আগেও বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোক্তা অধিকার বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

Related Articles

Back to top button