মাছ কেটেই চলে নিলেশ বর্মনের সংসার
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, আখাউড়া , ব্রাহ্মণবাড়িয়া :
সড়ক থেকে সরু গলি দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের সড়ক বাজারের মাছ বাজার। এ অঞ্চলের পরিচিত মাছ বাজার এটি। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা জাতের ছোট-বড় মাছ কেনাবেচা হয় এ বাজারে। তাই ক্রেতা- বিক্রেতাদের আনাগোনায় সব সময়ই ব্যস্ত থাকে পৌর শহরের এই মাছ বাজারটি। বাজারের এক কোনে বসে মাছ কাটছেন নিলেশ বর্মন। চেহেরায় বয়সের স্পষ্ট ছাপ থাকলে ও ধারালো বটিতে তার হাত চলছে যন্ত্রের মতো। এই বাজারে আরো দুই যুবক দোকান ভাড়া নিয়ে মাছ কাটলেও নিলেশ বর্মন মাছ কাটেন খোলা আকাশের নিচে বসেই। বাজারের মাছ ব্যবসায়ি সমীর দাস বলেন,সকাল ৭ টার দিকে তিনি বাজারে আসেন। তার মতো যারা মাছ কুটে তারাও আসেন একই সময়ে। বাড়িতে যান দুপুরের দিকে।বাজারে আসা বেশির ভাগ মানুষই তাদের কাছে মাছ কাটতে দেন।তবে ছোট, বড় ও মাঝারি তিন ধরনের মাছই কাটেন তারা। প্রতি কেজি মাছ কাটতে ১৫ – ২০ টাকা নিয়ে থাকেন। তবে হোটেল ব্যবসায়িরা নিয়মিত আসেন বলে মাছ কেটে একটু কম টাকা দেন। আবার অনেক বড় মাছ নিয়ে আসা ক্রেতা কাটার পর খুশি হয়ে বকশিস দেন।
বাজারে গিয়ে দেখা যায় দুই সহযোগি মাছ পরিচ্ছন্ন করছে আর নগ্ন পায়ে বটি রেখে কাঠের ওপর সারাক্ষণ মাছ কাটছেন নিলেশ বর্মন। উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের নিলেশ বর্মন জানান আগে বাপ দাদার পেশা মাছ ধরা ও বিক্রির সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। এ বাজারেই তিনি মাছ বিক্রি করেছেন প্রায় ৩০ বছর। পরে লোকসান, দেনা -পাওনা ও ঝামেলা এড়াতে তিনি এ পেশায় চলে আসেন। ভালো আয়ের আশায় এক সময় চলে যান ঢাকায়।উত্তরা ৬ নং সেক্টরের বাজারে বসে তিনি মাছ কুটতেন। ভালো আয়রোজগারে দুই মেয়ে ও এক ছেলের সংসার নিয়ে সুখেই দিন কাটতো নিলেশ বর্মনের। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে বেকার হয়ে পড়েন। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি বাড়ি চলে আসেন। জমানো অর্থও এক সময় শেষ হয়ে আসে। পরে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের পরামর্শে ধারালো বটি নিয়ে এই সড়ক বাজারেই মাছ কুটতে বসে যান।
নিলেশ বর্মন আরো জানান, দুই সহযোগীকে বেতন ও বসার জায়গার ভাড়া দিয়ে মাসে তার ১২ হাজার থেকে১৫ হাজার টাকা আয় হয়। তা দিয়ে কোনো রকমে এখন তার সংসার চলে। তবে তাতে কোনো আক্ষেপ নেই তার। কারণ ভূমিহীন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বাড়ির জায়গা সহ পাকা ঘর উপহার দিয়েছেন তাকে। সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন জেলে সম্প্রদায়ের নিলেশ বর্মন।
সড়ক বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মাছ ব্যবসায়ি বিধান দাস বলেন, । ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য ক্রেতারা মাছ কিনে তার কাছে চলে আসে। ক্রেতাদের পছন্দ মতো তিনি সেই মাছ সুন্দরভাবে কেটে ভালো ভাবে ধুয়ে ব্যাগে ভরে দেন। পরে ক্রেতারা সেই মাছ আনন্দে বাড়ি নিয়ে যান।