Breakingঅপরাধসারাদেশ

শ্রীনগরের সমঝোতায় চলছে অবৈধ ৪ ড্রেজার

প্রশাসন নিরব

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক , শ্রীনগর ,মুন্সীগঞ্জ : শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নে ভড়াট হচ্ছে প্রায় শতাধিক কৃষি জমি ও জলাশয়। এসব ভড়াট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ৪টি অবৈধ ড্রেজার। এই ইউনিয়নটিতে রাজনৈতিক ২টি গ্রুপের মধ্যে বৈরিতা থাকলেও অবৈধ এই বানিজ্যের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে রয়েছে সমাঝোতা।

 

অভিযোগ রয়েছে, এর নেতৃত্বে একপক্ষে রয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও কোলাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এম মাহবুব উল্লাহ কিসমত ও অপরপক্ষে রয়েছেন কোলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবু। তবে দুইজনই ভাগ বাটোয়ারার বিষয়টি অস্বীকার করলেও সমঝোতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

 

মঙ্গলবার দুপুরে কোলাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা গেছে অবৈধ ড্রেজারের কারনে রাস্তা খুড়ে পাইপ নেওয়া, বাড়ির উপর দিয়ে লাইন টানা ও বুস্টারের বিকট শব্দে অতিষ্ট মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। অনেকেই প্রশ্ন তুলেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদ করলেও গত ১ মাসে এখানে কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি। প্রশাসনের অনিহার কারণ অজ্ঞাত।

শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নে অবৈধ ভাবে বালু ভড়াট নিয়ে দ্বন্ধের কারনে একাধিক গ্রুপের মধ্যে এর আগে বেশ কয়েকবার মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে দীর্ঘদিন ওই এলাকায় ড্রেজার বানিজ্য বন্ধ ছিল। এই অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে ফাটল দেখা দেয়। গ্রুপিং তৈরি হয়ে প্রকাশ্যে বৈরিতা শুরু হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে লৌহজং উপজেলার এক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় ড্রেজার ব্যবসা নিয়ে দুই গ্রুপের যৌথ সভায় কে কত টাকা নিবে সেই বিষয়ে সমজোতার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর থেকে লৌহজংয়ের ওই নেতা প্রশাসনকে ম্যানেজ সহ ৪টি ড্রেজার পরিচালনার দায়িত্ব নেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এই ইউনিয়নে যত ঘনফুট মাটি ভড়াট হবে তত ঘনফুট মাটির জন্য প্রতি গ্রæপ ১টাকা ৩০ পয়সা হিসাবে মোট ২ টাকা ৬০ পয়সা করে পাবে। এই কারনে যশলদিয়া-কান্দিপাড়া ও কবুতর খোলা এলাকার পদ্মাতীরে স্থাপিত ড্রেজার লাইনের বালুবাহী জাহাজের সামনে ৩ গ্রæপের লোকজন উপস্থিত থেকে কত জাহাজ বালু আনলোড হলো সে হিসাব রাখে।

সরজমিনে উত্তর কোলাপাড়া,গাবতলা,দোগাছি,ওয়াসা রোড সহ বেশ কয়েকটি স্থানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মৌজায় প্রায় শতাধিক কৃষি জমিতে বালু ভড়াটের জন্য পকেট করে রাখা হয়েছে। বেশ কিছু জমি ইতি মধ্যে ভড়াট করা হয়েছে। বাকিগুলোতে ড্রেজারের পাইপ স্থাপনের কাজ চলছে। পকেট করা এসব জমির বেশীর ভাগই ধানী জমি। এগুলোতে এবছরও ধান রোপন করা হয়েছিল। জলাশয়গুলো কেন ভড়াট করা হচ্ছে তা বলতে পারছেন না ড্রেজারে নিযুক্ত শ্রমিকরা। তবে এলাকায় চলাচলের রাস্তা খুড়া খুড়ির কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

 

এই বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য এম মাহবুব উল্লাহ কিসমত বলেন, আমাকে জড়িয়ে ভাগবাটোয়ারর বিষয়ে যদি কেউ কোন কথা বলে থাকে তা সঠিক নয়। তবে এলাকার উন্নয়নের জন্য স্থানীয় জনগনের কাছ থেকে বালু ভড়াটের দাবী রয়েছে।

 

কোলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ড্রেজার বন্ধ করা দরকার। আমার বাড়ির পাশ দিয়েও লাইন টানা হয়েছিল। কিন্তু ড্রেজার বন্ধে কোন রকম ফলাফল পাই না। যেহেতু রোধ করতে পরিনা সেহেতু এক গ্রুপ লাভবান হয়ে যায়। তাহলে অন্য গ্রুপ কি দোষ করছে। এ কারণে ড্রেজার চালানোর বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু ভাগ বাটোয়ারার বিষয়টি সঠিক নয়।

শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, অবৈধ ড্রেজার বন্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এক্ষেত্রেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Related Articles

Back to top button