রাঙামাটির দৃষ্টিনন্দন নির্মিত সেতু চলতি মাসেই উদ্বোধন
চেঙ্গী দর্পন,স্টাফ রিপোর্টার ,রাঙামাটি : পার্বত্য রাঙামাটির কৃত্রিম হ্রদ ও মূল ভূমির গা ঘেষেই সম্ভাবনাময় লংগদু, নানিয়ারচরের অবস্থান। হ্রদের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চেঙ্গি নদী ওই এলাকাটিকে করে রেখেছিল উন্নয়নের যোগাযোগে বিভক্ত । আর পুরো উপজেলাকে উন্নয়নের মূল স্রোতে ফেরাল মাত্র ৫০০ মিটারের দৃষ্টিনন্দন একটি সেতু। ২২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। যদিও ইতোমধ্যেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাহাড়ের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো এ সেতুটির নাম হয়েছে রাঙামাটির পদ্মা সেতু হিসেবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া এ সেতু হবে পাহাড়ের সমৃদ্ধির প্রতীক। রাঙামাটি ৫০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)। পাহাড়ের এ আলোচিত ‘চেঙ্গিসেতু’র নাম ‘বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ সেতু’ রাখার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িসহ ছয়টি পাহাড়ি উপজেলার অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের ভাগ্য বদলাবে সেতুটি। এ সেতুর সুফল ভোগ করবে রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু, খাগড়াছড়ি-বাঘাইছড়ি-সাজেকের বাসিন্দারা।ননিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, চেঙ্গিসেতুর কারণে নানিয়ারচরসহ পাশের দুই উপজেলা লংগদু-বাঘাইছড়ি-সাজেক ও খাগড়াছড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত হবে। এতে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি আসবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথে এ ধরনের অনেক উন্নয়ন কাজই করে চলেছে সরকার। পাহাড়ি জনপদে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার লক্ষ্যে যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে দৃশ্যমান হলো এই সেতু। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা সেতুটি নানিয়ারচরকে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনবে যেখানে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে শুরু করে রাঙামাটি শহর পর্যন্ত যোগাযোগের একটি নতুন বেল্ট গড়ে উঠবে। পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত দাম পাবে এ অঞ্চলের মানুষ। পাহাড়ি ফল ফলাদি উৎপাদনের পাশাপাশি কমলা চাষে নানিয়ারচরের চাষিরা ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানিয়ারচর উপজেলার বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু ১০ কিলোমিটার সড়কে চেঙ্গী নদীর ওপর নানিয়ারচর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ষাকালে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বাড়লে অতিমাত্রায় ঢেউয়ের কারণে এ এলাকায় দেশীয় ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকত। আবার গ্রীষ্মে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেলে তখনো নৌযান চলাচল বাধার মুখে পড়ে। দুই পরিস্থিতিতেই রাঙামাটি সদর থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন থাকতে হতো এই জনপদের মানুষকে। যুগের পর যুগ চরম কষ্টে থাকা এ জনপদের মানুষের জন্য শান্তি চুক্তির পর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির মূল কাজ চেঙ্গী নদীর ওপর ৫০০ মিটার পিসি গার্ডার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর সঙ্গে রয়েছে ২ দশমিক ২০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। সঙ্গে রয়েছে নদীশাসন এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতুটি নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে লংগদু উপজেলা হয়ে মারিষ্যা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা। এ সেতু নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং পর্যটনশিল্পের বিকাশের পথ সহজ হয়েছে।
মহালছড়ি সড়ক : পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পর পাহাড়ে সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির গুইমারা থেকে মহালছড়ি হয়ে নতুন একটি সড়ক নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী। এর বাইরে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ : পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আপত্তি অগ্রাহ্য করে সরকার রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা এ প্রতিনিধিকে জানান এসব প্রতিষ্ঠানে পাহাড়িরা ২৫ শতাংশ কোটা পাবে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি অপূর্ব সুযোগ।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ের সবখানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। জীবনমান উন্নত হয়েছে। দুর্গম বরকল ঠেগামুখেও সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। পাহাড়ি বাঙালি সাধারণ মানুষ বলবে, তারা ভালো আছে।