চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক,সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) : দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বড়দুয়ারা বনবিটের আওতাধীন সামাজিক বনায়নসহ সংরক্ষিত বনের মূল্যবান গাছ প্রতিদিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। দিন দুপুরে প্রকাশ্যে একাধিক চক্র সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নিয়ে গেলেও দেখছেনা বনবিভাগের লোকজন। এভাবে নির্বিচারে সরকারি বনের গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে কেটে নেওয়া হাজারও গাছের গুড়ালি।
বনবিভাগের লোকজনের ছত্রছায়ায় স্থানীয় একাধিক চক্র এই বন উজাড়ে জড়িত বলে অভিযোগ করছেন সামাজিক বনায়নের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বাঁশবনিয়ার পূর্ব-দক্ষিণে সারাশিয়া মৌজায় বড়দুয়ারা বনবিটের সংরক্ষিত বন ও সামাজিক বনায়ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড় ও টিলায় টিলায় চলছে গাছ কাটার উৎসব। একেকটি স্থানে ১৮ থেকে ২০ জন শ্রমিক নানান প্রজাতির গাছ কেটে টিলার পাশে মজুদ করছে। কিছু শ্রমিক কেটে নেওয়া গাছ ট্রাকে লোড করছে। এসময় শ্রমিকরা জানান, তারা দৈনিক ৬শ টাকা মজুরির ভিত্তিতে গাছ কাটছে। বাগানটি কার জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, আজিজ আলম নামের এক মেম্বারের কাছ থেকে বাগানটি ক্রয় করছেন বাজালিয়ার ইউপি সদস্য মাহবুবুল আলম প্রকাশ (মাহালুম) মেম্বার। তিনি নিয়মিত গাছ কাটার বিষয়টি দেখবাল করে থাকেন।
এর পূর্বপাশে অপর এক পাহাড়ে সামাজিক বনায়নের বাগান থেকে গাছ কাটছে আরেকটি চক্র। সেখানকার শ্রমিরা জানান, সামাজিক বনায়ন হলেও আগর গাছের ফাঁকে ফাঁকে পাবলিকের গাছও রয়েছে। বনবিভাগের লোকজন এসে একাধিক বার দেখে গেছেন। তারা (বনবিভাগের লোকজন) বলে গেছেন যাতে আগর গাছের কোন ক্ষতি না হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব নন্দীসহ একটি সিন্ডিকেট বনের গাছগুলি কাটছে।
জানা যায়, বড়দুয়ারা বিটের আওতাধীনে সারাশিয়া মৌজায় পাহাড় ভূমিতে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে আগরগাছ লাগানো হয়েছিল। আর কিছুদিনের মধ্যে এ সামাজিক বনায়নের গাছ নিলামে বিক্রির পর উপকারভোগী সদস্যরা তাঁদের নির্ধারিত টাকা পাওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ একাধিক চক্র বাগানের গাছ কেটে নিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তাতে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা কোন লভ্যাংশই পাওয়ার আশা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপকারভোগীর এক সদস্য জানান, বনকর্মীদের সহযোগীতায় প্রতিদিন বড়দুয়ারা বিটের সংরক্ষিত বন উজাড় হচ্ছে। বনবিভাগের লোকজন বড় অংকের টাকার বিনিময়ে বনের গাছ কাটার সুযোগ করে দিচ্ছে। নির্বিচারে গাছ কেটে বন সাবাড় করার বিষয়ে বন বিট অফিসারকে জানিয়ে কোনও কাজ হয় না। উল্টো যারা তথ্য দেয়, তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। বনের গাছ কাটার বিষয়ে রাজীব নন্দীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা পাবলিকের বাগান। ইদ্রিস নামের একজনের কাছ থেকে বাগানটি কিনেছেন।’
সারাশিয়া মৌজায় সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে বড়–দুয়ারা বিট কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিটের আওতায় সামাজিক বনায়নের কোনও গাছ কাটা হচ্ছে এমন খবর শুনি নাই। গাছ কাটছে এমন ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের পদুয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি শুনেছি, সেখান থেকে কিছু গাছ উদ্ধারও করা হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়ে মামলা হয়েছে।’