বিনোদন

জুবিন গার্গের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া বিদায়

৯ নভেম্বর ১৯৭২ সালে মেঘালয়ের তুরা শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জুবিন গার্গ (জীবন নাম: জুবিন বার্থাকুর)। একজন বহুমাত্রিক শিল্পী-গায়ক, সুরকার, অভিনেতা, পরিচালক, কবি — যিনি শুধু আসামের নয়, ভারতের সঙ্গীত জগতে নিজেই এক আলাদা ছাপ রেখে গেছেন।

 

 

২০২৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, সিঙ্গাপুরে একটি সাঁতার (প্রথম দিকে ‘‘scuba diving’’ বলা হলেও পরবর্তীতে নিশ্চিত হওয়া যায় সাঁতার কাটাকাটির সময় ঘটে এই দুর্ঘটনাটি) যেমন তেমন ভাবে নয় বুঝে ওঠা হৃদয় বিদারক এক ঘটনায় তিনি আমাদের মাঝে নেই।

 

 

সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ হিসেবে “ডুব – drowning” উল্লেখ করেছে। এই ঘটনাকে ঘিরে জনমতের চাপ ও সন্দেহের কারণে আসাম সরকার একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে।

 

 

শেষ যাত্রা ও জন হৃদয়ের বেদনায় মিলিত হওয়ার পথে :
এর আগে, ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, জুবিন গার্গের শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আসামে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল। এই তথ্য যদিও সরাসরি সত্যতা নিয়ে কিছু সন্দেহ আছে — কোনো নির্ধারিত গণ পরিসংখ্যান নেই — তবে বিধি বদ্ধভাবে বলা যাবে, তাঁর শেষ যাত্রাকে ঘিরে আসামের প্রতিটি গলি, শহর, গ্রাম, বাঁশি, গানের সুর সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।

 

 

সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর পরুrম্ভিক দেহ গৃহপ্রন্দ হওয়ার পর গুৱাহাটীর Arjun Bhogeswar Baruah Sports Complex-এ রাখা হয় জনসভা ও শোক প্রকাশের জন্য। তার পর ২৩ সেপ্টেম্বর, ফুল রাজ্য সম্মানে (State Honours) কায়রানিক্রিয়া ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় Kamrup জেলার Kamarbuchi গ্রামে। শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়।

 

জুবিন গার্গ শুধু একজন গায়ক ছিলেন না ,তিনি ছিলেন জনমানুষের কণ্ঠস্বর।তিনি কোনও ধরণের সামাজিক বিভাজন মান্য করতেন না। একটি বক্তৃতায় তিনি বেশ চাবুক কথায় বলেছিলেন, “আমার কোন জাতি নাই, আমার কোন ধর্ম নাই, আমি সবার।”

 

তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতেন: ফুটপাতে খাবার খেতেন, সাধারণ সবজি বাজার থেকে কিনতেন । তাঁর ব্যক্তি সাধারণ জীবনটা একভাবে জনগণের জীবনের সঙ্গে মিশে ছিল। চা-বাগানে যারা কাজ করে, জীবিকার জন্য সংগ্রাম করে, তাঁদের পক্ষে জুবিন মুখ খুলতেন, তাঁদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতেন। শিল্পী হিসেবে নয়, সমাজ চিন্তাবিদ এবং মানুষের অধিকার প্রিয় মানুষ হিসেবেও তিনি স্মরণীয় ছিলেন।

গানের কথা বললেই, তাঁর কিছু জনপ্রিয় গান আজও মানুষের হৃদয়ে অম্লান:
“চোখের জলে ভাসিয়ে দিলাম মনের ঠিকানা”,
“বোঝেনা সে বোঝেনা”,
“প্রিয়ারে প্রিয়ারে”,
“ইয়া আলী”,
“চল চম্পা চল”,
“যে ফুল দিয়ে জীবন সাজে সে ফুল লাগে পুজোর কাজে”
প্রত্যেকটা গান যেন একটি গল্প, একটি অনুভূতি, একটি ভালোবাসার খোঁজ।

 

নির্মল হৃদয়ে স্মৃতিতে দোলা দেবে তার ছায়া:
কিন্তু আজ প্রশ্ন জাগে , এই ১৫ লক্ষ মানুষের বলিষ্ঠ সংখ্যাটি কি রেকর্ড করা হয়েছে? বিভিন্ন সূত্রে দেখা যায়, গণ মানুষের অংশ গ্রহণ ব্যাপক ছিল, অনেকেই রাতভর শোক সভার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন, রাস্তা ছিল মানুষের পদচারণায় দাপিয়ে। তবুও গণমাধ্যমে “১৫ লক্ষ” সংখ্যা প্রচলিত হয় এটিই ছিল মানুষের অনুভূতির এক অভিব্যক্তি।

 

জুবিন গার্গের জীবনের মতোই তাঁর বিদায়ও ছিল এক মহাকাব্যিক মুহূর্ত। তার সুর, তার ছন্দ, তার মানসিকতা — সবই আজ অসম, ভারত ও তার পারিপার্শ্বের মানুষদের হৃদয়ে এক অম্লান স্মৃতি হয়ে থাকবে।

লেখক: একরামুল হক , সংবাদকর্মী।

Related Articles

Back to top button