আলীকদমে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’ পালিত
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, আলীকদম (বান্দরবান) : বৈসু, সাংগ্রাই এবং বিজু তিনটি শব্দের মধ্যোক্ষর দিয়ে সৃষ্ঠ শব্দ বৈসাবি। ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজু নামে তিন সম্প্রদায়ের ভাষা থেকে নেয়া মধ্যাক্ষর দিয়ে সৃষ্ঠ বৈসাবি প্রতি বছর পাহাড়ি তরুন তরুণীদেরকে উৎসবের আমেজে মাতিয়ে তোলে। একই ভাবে করোনার প্রদুর্ভাবের মধ্যেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে বান্দরবানের আলীকদমে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’ পালিত হয়েছে।
চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলা পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতি বছর এই উৎসব পালন করা হয় পাহাড়ে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায়। প্রতিবছর এই সময়ে বৈসাবির আমেজে পাহাড়ি জনপদ মুখরিত হয়ে থাকে। সম্প্রতিক বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণে এবারে ততটা ঝাকজমকপূর্ণ না হলেও প্রধান প্রধান উৎসবগুলো পালন করেছে পাহাড়ি তরুণ তরুণীরা। তার মধ্যে অন্যতম হল নদীতে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করা।
সোমবার (১২ এপ্রিল) থেকে তিন দিন ব্যপি শুরু হয়েছে এই সামাজিক উৎসব। এই উৎসবের অন্যতম দিক হলো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা যেমন ঘিলা খেলা, খড়ং খেলা, লাটিম খেলা, পাতিল দৌড়, দড়ি টানা, হাড়ি ভাঙ্গা, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা ও স্ব স্ব ধর্মীয় উপসনা।
তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের উৎসবের প্রথম দিন ফুলবিজু, দ্বিতীয় দিন মূলবিজু এবং তৃতীয় দিন গোজ্যেপোজ্যে দিন। মারমা সম্প্রদায়ের প্রথম দিন পাইংছোয়াই, দ্বিতীয় দিন সাংগ্রাইং আক্যা, তৃতীয় দিন সাংগ্রাইং আপ্যাইং এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রথম দিন হারিবৈসুক, দ্বিতীয় দিন বৈসুকমা, ও তৃতীয় দিন বিসিকাতাল নামে এই উৎসব পালন করে। এবছর উৎসবের প্রথমদিনে মাতামুহুরী নদীতে ফুল ভাসিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ধুংড়ি মার্মা। তবে করোনা ভাইরাস ঊর্ধ্বগতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে এবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ জনসমাগম সৃষ্টি হয় এমন সব আয়োজন স্থগিত করেছে বৈসাবি উদযাপন কমিটি। তবে স্বল্প পরিসরে নদীতে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরের বিদায় ও বরণ করা, কেনাকাটা ও ঘরবাড়ি সাজানোর কাজে খামতি রাখেনি সম্প্রদায়ের লোকজন।
আলীকদম উপজেলা তঞ্চঙ্গ্যাঁ সম্প্রদায়ের বিষু/বিজু উৎসব উৎযাপন কমিটির আহব্বায়ক দিপু তঞ্চঙ্গ্যাঁ বলেন, প্রতিবছর আমরা ঝাঁকজমকভাবে বিষু/বিজু পালন করি। কিন্তু গতবছর করোনার কারণে তেমন জাঁকজমক হয়নি। এ বছরও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তবে গ্রামাঞ্চলে করোনার প্রভাব কম। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বিষু/বিজু উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিয়েছি।