৩ মাস ১৭ দিন পর রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু
চেঙ্গী দর্পন ,স্টাফ রিপোর্টার, রাঙ্গামাটি : দীর্ঘ তিন মাস ১৭ দিন বন্ধ রাখার পর গত মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে বৃহত্তর কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ। প্রথম দিনেই রাঙ্গামাটি বিএফডিসি ৪ টি ল্যান্ডিং ঘাট রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, মহালছড়ি ও মারিশ্যা ঘাটে ১৪৫ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তবে বরফ ও পরিবহন সংকট এবং প্যাকেজিং সমস্যার কারনে ব্যবসায়ী মারাত্মক ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
১৭ আগষ্ট ২০২২ বুধবার মধ্য রাত ১২ টা থেকে কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকে জেলেরা হ্রদে মাছ শিকার শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাছ আসতে শুরু করেছে ঝাকে ঝাকে কাচকি চাপিলা সহ ছোট জাতের মাছ। দীর্ঘদিন পর মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় ফিরে পেয়েছে দীর্ঘদিনের কর্মচাঞ্চল্য। সকাল থেকে ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে মাছ প্যাকিং করে রপ্তানী শুরু করেছে। তবে হ্রদের পানি কম হওয়ায় বিপুল পরিমান ধরা পাচ্ছে। আগামী কিছু দিনের মদ্যে মাছ শুন্য হওয়ার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সাধারণ ব্যাবসায়িরা জানান রাঙ্গামাটি বিএফডিসির মুল সমস্যা হচ্ছে স্থান সংকুলান। যতগুলো ব্যাবসায়ী রয়েছে সে পরিমাণ জায়গায় না থাকায় সময়স্যায় পড়তে হয়েছে। ইতিমধ্যে জয়গা না থাকার ফলে বোটের মধ্যে মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বিকালে কয়েকটি ব্যাবসায়ী প্রায় দেড় শতাধিক ড্রাম মাছ নদীতে ফেলে দিয়েছে বলে জানান।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল শুক্কুর জানান, দীর্ঘদিন পর মাছ শিকার শুরু হওয়ায় আমরা সকলেই খুশী। তবে মাছের সাইজ খুবই ছোট। এই মাছ ঢাকায় যেতে যেতে দাম কী রকম পাবো তা জানি না। আশা করছি আগামী দিন গুলোতে বড়ো মাছের আধিক্য বাড়বে ব্যবসাও ভালো হবে।
এদিকে রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসসায়ী সমবায় সমিতি উদয়ন বড়ুয়া বলেন, এ বছর ব্যবসায়ীরা খুবই ক্ষতির দিকে রয়েছে। যেমন পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তেমনি সকল সেক্টরে মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রদে নাব্যতা কমে যাওয়ায় বেশী দিন মাছ শিকার করতে পারবে তাও আমাদের মনে হচ্ছে না। হ্রদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আমরা বার বার তাগিদ দিলেও কোন কর্ণপাত হয়নি। তিনি বলেন, হ্রদের মাছ শিকার শুরু হয়েছে। কর্ম চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পানি কম থাকায় মাছ ও বেশী ধরা পড়ছে। তার পরও আমরা বিএফডিসির সাথে সমন্বয় করে একটি টাইম আমরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়েছি সকল ব্যবসায়ীকে। আশা করছি সকলেই আই নিষেধজ্ঞা মান্য করবে। প্রতিদিন বিকাল ৩ টা পর্যন্ত মাছ ল্যান্ডিং হবে রাতে আর কোন মাছ আসবে না। বিএফডিসি রয়েল্টি বাড়িয়ে দেয়ায় আমাদের বিশাল ক্ষতি হচ্ছে।
বিএফডিসির ব্যবস্থাপক কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাপ্তাই হ্রদের মাছ আহরণ ও বাজার জাত করণের সুবিধার্থ্যে ল্যান্ডিং প্যাকিং করে প্রায় আজ বিকাল পর্যন্ত ১৪৫ শ মেট্রিক টন মাছ বাজার জাত করতে পারবে। আজ বিকাল ৩ টার পর থেকে মাছ ল্যান্ডিং করা হয়েছে। আবার আগামীকাল সকাল ৬ টা থেকে আবারো মাছ ল্যান্ডিং শুরু হবে। সেই চিন্তা ভাবনা করে মাছ শিকার করতে জেলেও ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গত ১ মে থেকে ৩ মাসের জন্য হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ গত মধ্য রাত থেকে শুরু হওয়ায় রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদের সাথে জড়িত প্রায় ২২ হাজার জেলে পরিবার ও ব্যবসায়ী সহ প্রায় ৫০ হাজার পরিবার সুখের মুখ দেখছেন।