হেফাজত ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকাল
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় শোকের ছায়া
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের হাটহাজারী আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজত ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী (৯০) ইন্তেকাল করেছেন ( ইন্নালিল্লাহে . . রাজেউন)।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি পুরান ঢাকায় গেন্ডিরিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাঁর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী। হুজুরের ইন্তেকালের খবর এসে পৌঁছলে হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
জানা যায়,আল্লাহ শাহ আহমদ শফী ১৯৩০ খৃষ্ঠাব্দে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিরার টিলা গ্রামে অভিজাত ,সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী দ্বীনদার আলেম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম বরখত আলী। মাতার নাম মুছাম্মদ মেহেরুন্নেছা বেগম। শিশুকালে পিতামাতা তাকে কুরআনে কারিম শিক্ষার জন্য মৌলভী আযীযুর রহমানের নিকট প্রেরণ করেন। এর ফাকে নিয়মিত ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষা ও শিক্ষা লাভ করেন। অতপর সফরভাটা মাদ্রাসায় প্রাথমিক কিতাব পাঠে মনোনিবেশ করেন। প্রতিভাবান এ কিশোর জ্ঞান আহরণের অদম্য স্পৃহা নিয়ে ছুটে যান ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল আরাবিয়া ইসলামী জিরীতে। জিরী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ৫/৬ মাস অধ্যায়ন করেন।
১৯৪১ সালে হাফেজ ইমতিয়াজ সাহেবের প্রচেষ্ঠায় ১০ বছর বয়সে এশিয়া মহাদেশের ২য় বৃহত্তম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্টান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলামে ভর্তি হন । ১০ বছর বয়সে তিনি পিতামাতা হারিছেন। দারুল উলূম হাটহাজারীতে তিনি একাধারে ১০ বছর পরম আত্মত্যাগ ও খোদা প্রদত্ত মেধা ,সদাচার,লেখাপড়ায় একাগ্রতা প্রভৃতি গুণাবলির মাধ্যমে অতিক্রান্ত করেন। সাথে সাথে যুগশ্রেষ্ঠ আসাতিযায়ে কিরামের ভালবাসা এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অন্যন্ত কৃতিত্বের সাথে উর্দু,ফার্সি ,আরবী ভাষা ও সাহিত্যসহ ইলমে নাহু ,ইলমে সরফ ,ইলমে ফিক্বহ, মানতিক ( যুক্তিবিদ্যা) , ফালসাফা (দর্শনবিদ্যা),বালাগাত (অলঙ্কার বিদ্যা) প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন। দারুল উলূম মুঈনুল ইসলামে হযরত যাদের কাছে লেখাপড়া করে ধন্যহন তাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেযোগ্য হলেন, মুফতিয়ে আযম, মুফতী ফয়জুল্লাহ রাহ, শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল কাইউম রাহ, শায়খুল আদব আল্লামা মুহাম্মদ আলী নিজামপুরী রাহ, শারেহে মিশকাত আল্লামা আবুল হান রাহ।
তিনি ইলমে হাদিস ও ইলমে তাফসীরের উ”চতর শিক্ষা হাসিল করার অদম্য বাসনা নিয়ে ১৯৫০ সালে ইসলামি শিক্ষার প্রাণ কেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী হাদিস শিক্ষার পাদপীঠ মসকল ইলমের সূতিকাগার ,এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠতম দ্বীনি বিদ্যারিকেত দারুল উলূম দেওবন্দে গমন করেন। দেওবন্দে হযরত ফুনূনাতে আলিয়া, দাওরায়ে হাদিস, উচ্চতর তাফসীর শাস্ত্র অধ্যায়ন করেন। দেওবন্দ থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তিনি তার প্রথম হিতাকাঙক্ষী ওস্তাদ দারুল উলূম হাটহাজারীর তৎকালীন মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আবদুল ওয়াহার রহঃ এর সাথে সাক্ষাতে মিলিত হন। তিনি তার চরিত্র মাধুরী ও অস্যংখ গুণাবলী দেখে তাকে দারুল উলূমে শিক্ষক পদে নিয়োগ দান করেন।
১৯৮৭ সালে তৎকালীণ জামিয়ার মহাপরিচালক হাফেযকারী আল্লামা হামেদ রাহ ইন্তেকাল করলে জামিয়ার সর্বোচ্চ মজলিসের শূরার সর্বসম্মত সিন্ধান্ত অনুযায়ী জামিয়া পরিচালনার গুরুদায়িত্ব হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব শাহ আহমদ শফীর উপর অর্পিত হয়। তিনি দায়িত্ব গ্রহনের পর জামিয়ার ব্যাপক উন্নতি হয়। ১৯৯৫ সালে জামিয়া প্রতিষ্ঠার শর্তবর্ষ ফ’র্তি উপলক্ষে শতবার্ষিকী দস্তারবন্দি সম্মেলন সফল ভাবে সম্পন্ন করা হয়। উক্ত সম্মেলনে দেশ বিদেশের বহু প্রথিতযশা ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন। পরবর্তী ২০০২ সালে তার তত্ত্বাবধানে সফল ভাবে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তবার্ষিকী দস্তারবন্দী মহা সম্মেলন। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মাদ্রাসার শুরা বৈঠকের মাধ্যমে মহাপরিচালক পদ থেকে তিনি স্বে”ছায় অবসর গ্রহন করেন। বৃহস্পতিবার রাতে শুরা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে শুক্রবার বিকালে উন্নত চিকিৎসা জন্য পুরান ঢাকায় গেন্ডিরিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, চার কন্যা,দুই ছেলে ,আত্মীয় স্বজন, অসংখ্য শিক্ষার্থী ও অনেক গুনাগ্রাহী রেখে গেছেন।