সিংগাইরে বসত বাড়িতে ২১ টি মৌচাক
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক , সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) : মানিকগঞ্জের সিংগাইরে এক প্রবাসীর বসতবাড়িতে বসেছে প্রায় দু’ডজন মৌচাক। এ থেকে প্রতিবছর দেড় থেকে দু’মণ খাঁটি মধু আহরণ করা হচ্ছে। ফলে, এলাকার মৌয়াল এখন ওই বাড়ি থেকেই টাটকা মধু সংগ্রহ করছে।
সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের বাস্তা-মাটিকাটা গ্রামের প্রবাসী নূরুল হকের বসতবাড়ির বিল্ডিংয়ের চারদিকে বসেছে মৌমাছির মেলা। গত ৫ বছর যাবত এ শীত মৌসুমে মৌমাছিরা এসে ওই বিল্ডিংয়ে মৌচাক তৈরি করে মধু আহরণ করে। প্রায় পুরো বছর ধরেই ওই বাড়িতে কম-বেশী মৌমাছি থাকে।
জানা গেছে, সারাদিন মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত থাকে ওই এলাকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারদিকে মৌ-মৌ গন্ধ ছড়িয়ে উড়ছে মৌমাছির দল। সেখানে বিল্ডিংয়ের চারপাশে প্রায় দু’ডজন চাক গড়ে তুলেছে মৌমাছিরা। বিল্ডিংয়ের পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের পুরোটাই যেন দখলে নিয়ে বাসা বেঁধেছে মৌমাছিরা। ওই বাড়ির পশ্চিম পাশ ঘেষে রাস্তায় চলাচলকারী লোকজনও গাড়ী থামিয়ে মৌচাকগুলো দেখে যাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই মৌমাছির চাক দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করছে। চারদিক ছেয়ে গেছে মৌচাকে।
বাড়ির মালিক প্রবাসী নূরুল হকের স্ত্রী বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমাদের বাড়ির এ বিল্ডিংয়ে ২৫-৩০ টি মৌচাক বসে। এবারও ২১ টি মৌচাক তৈরি হয়েছে। এসব মৌমাছি আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। নূরুল হকের স্ত্রী আরো জানান, সারা বছরই দু’-তিনটি মৌচাক থাকে। কিন্তু শীত এলে ঝাঁকে-ঝাঁকে মৌমাছি এসে তার বাড়িতে মৌচাক তৈরি করে। মাস দুয়েক পর আবার চলে যায়। গত বছর এ শীত মৌসুমে ২৩ টি মৌচাক ছিল। এবার ইতিমধ্যেই ২১ টি মৌচাক বসেছে। তিনি বলেন, দু’মাসে ৩ বার চাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রতিবার ২০-২২ কেজি মধু পাওয়া যায়। বাড়ি থেকেই সাথে সাথে ১ হাজার টাকা কেজি দরে মধু বিক্রি করে দেই। প্রতিবেশী স্থানীয় ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ তাহের আলীর পুত্র আব্দুল মোতালেব বলেন, আমার জানা মতে, ৪/৫ বছর যাবত শীতকালে নূরুল হকের বাড়িতে মৌচাক বসে। খবর শুনে এলাকার বাইরে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন দেখতে আসে। মৌচাক কাটার দিন খাটি মধু নেয়ার জন্য মানুষ লাইন ধরে অপেক্ষা করে।
স্থানীয় বাস্তা চরের মৌয়াল আমোদ আলী বলেন, চার পাঁচ বছর ধরেই ওই বাড়ির বিল্ডিংয়ে মৌমাছির চাকগুলো কেটে আমি মধু নামাই। অন্যান্য বছর ৩০-৩২ টি চাক বসলেও এবার বসেছে ২১ টি। তাই অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মধু কম। আগের বার প্রতি কাটায় ২৮-৩০ কেজি মধু তুললেও এবার পাওয়া যাচ্ছে ২০-২২ কেজি। বাড়ির মালিককে অর্ধেক দিয়ে বাকিটুকু আমি নিয়ে যাই।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান সপন বলেন, সম্ভবত ওই বাড়িতে রানী মৌমাছির জন্ম বা উৎপত্তি হয়েছিল, তাই প্রতি বছর এসে বাসা বাঁধে। তিনি আরো বলেন, এ এলাকায় জমিতে অধিক সরিষার আবাদ হওয়াতে ফুলের পরিমাণও বেশী। মধুর একমাত্র উৎস ফুল তাই মৌমাছিরা এখানেই আসে।