চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক , সালথা (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গত ৫ই এপ্রিল রাতে গুজবে সহিংসতার ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬ টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩২১ জনকে এজাহার নামিয় এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ৫ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে।
পুলিশ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ৮৯ জনকে আটক করেছে। গ্রেফতার এরাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পরেছে, পুরুষ শূন্য এলাকায় ফসলের মাঠসহ সব জায়গাতে কাজ করছে নারীরা।
উপজেলায় চাষ যোগ্য আবাদী জমি রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর, এই জমিতে পাট পেঁয়াজসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল উৎপাদন হয়। পুরুষ শূন্য এলাকায় জমির ফসল বাচাঁতে অসহায় নারীরা মাঠে কাজ করছে। এছাড়াও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করার জন্য বাজারে যাচ্ছেন নারীরা। যে কাজ গুলো সাধারণত পুরুষ লোকগুলো করতো পুরুষ মানুষ না থাকায় সেই কাজ এখন নারীরা করছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুরুষ মানুষ না থাকায় বৃদ্ধ শিশু ও নারীরা সর্বত্রই কাজ করে যাচ্ছে।
মাঠে কাজ করছে এমন বেশ কয়েকজন নারীর সাথে কথা হয়, সালথা এলাকার এক বয়স্কা নারী জানায়, তার স্বামী বয়স্ক মানুষ, চোখে কম দেখে, এই ঘটনার সাথে কোন ভাবেই তিনি জড়িত নাহ, তারপরেও তিনি ভয়ে বাড়িতে নেই, বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ না থাকায় মাঠে নিরানী দিচ্ছি, সরকারের কাছে অনুরোধ নিরাপরাধ ব্যাক্তিরা যেন কোন শাস্তি না পায়, যারা অন্যায় করেছে তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়।
নটখোলা এলাকায় জমিতে সেচ দেওয়ার সময় কথা হলে তিনি জানায়, বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ নাই, জমির ফসল বাচাঁতে মেশিন চালু করে তিনি নিজেই পানি দিচ্ছেন, ফুকরা গ্রামের এক নারী বলেন কি করবো পুরুষ মানুষ বাড়িতে নাই, কাজের জন্য কোন লোকও নাই তাই নিজেই কাজ করছি, আমরা এই অভিসাপ থেকে মুক্তি চাই।
উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বারী জানান, সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে, বর্তমানে পাটের আগাছা দমন ও সেচ খুবিই জরুরী, যদি ঠিক মত আগাছা দমন ও সেচ না দেওয়া হয় তাহলে আশানুরুপ পাট উৎপাদন হবে নাহ। এখন পাটের যদি ক্ষতি হয় তা পুষিয়ে উঠা সম্ভব নয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার জীবাংশু দাস বলেন, উপজেলায় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর চাষ যোগ্য আবাদী জমি রয়েছে, এর মধ্যে সব জায়গাতে পাট ও অল্প পরিমানে কিছু ধান রয়েছে, মাঠের ৮০ ভাগ ধান পাকলেই তাদের তা কর্তনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যদি কাল বৈশাখি ঝড় হয় তবে সব ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাছাড়া বর্তমানে এলাকার প্রধান অর্থকরি ফসল পাটের আগাছা ও সেচ ঠিকমত দেওয়া না হয় তাহলে কৃষি প্রধান এলাকার বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে।
সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসিকুজ্জামান বলেন, গুজব ছড়িয়ে তান্ডবের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬টি মামলা হয়েছে, ৩২১ জন এজাহার নামিয় এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ৫ হাজার জন কে আসামী করা হয়েছে, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এজাহার নামিয় ১৬ জন সহ মোট ৮৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় অন্যাদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে,
প্রসঙ্গত, গত সোমবার ৫ই এপ্রিল সোমবার ফরিদপুরের উপজেলায় লকডাউন কার্যকর করা না করা নিয়ে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার মাঝে গুজব ছড়িয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী তান্ডব ও ধ্বংশলীলা চালায়, তান্ডবলীলা শেষে বর্তামানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সময় উপজেলা পরিষদ ও থানা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। উত্তেজিত জনতা উপজেলা পরিষদ ভবন, উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলায় পরিষদ চত্তরে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুড়াল, গাছপালা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি, সহকারী কমিশনারের গাড়ি, মোটরসাইকেল, উপজেলার সামনে অবস্থিত পেট্রোল পাম্প, সালথা থানা ও কর্মকর্তাদের বাসভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করে। এই ঘটনায় জুবোয়ের হোসেন (২০) ও মিরান মোল্যা (৩৫) নামের দুই যুবকের মৃত্যু ও মোট ৮৯ জনকে আটক হয়েছে বলে জানা যায়।