সাতকানিয়ায় উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ
বিক্ষুব্ধ জনতার মোটরসাইকেলে আগুন
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, সাতকানিয়া , চট্টগ্রাম :
সাতকানিয়ায় চাঁদাবাজি করতে আসা উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। এসময় সন্ত্রাসীদের হামলায় ৩ জন আহত হয়েছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ৩টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের এক সহযোগীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা।
রবিবার দিবাগত রাত ও সোমবার সকালে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের বৈতারনী এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ শিবলী নোমান ও থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুরানগড় ইউপি চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার জানান, বিগত দেড় থেকে দুই বছর ধরে পাহাড়ি উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা এলাকায় এসে চাঁদাবাজি করছে। বিশেষ করে মৎস্য, ডেইরী ও পোল্ট্রি খামার এবং পানের বরজ মালিকদের কাছ থেকে মাসিক হারে চাঁদাবাজি করে আসছিল। ফলে এলাকার লোকজনকে নিয়ে বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পাহাড়ি উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করতে আসলে মসজিদের মাইকে ঘোষনা দেয়া হবে এবং সাথে সাথে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
গত রবিবার রাতে একদল পাহাড়ি উপজাতীয় সন্ত্রাসী বৈতারনী এলাকায় গ্রীণ ওয়াল্ড এগ্রো নামের একটি খামারে এসে চাঁদা দাবী করে। এ সময় তারা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় খামারের মালিক সহ লোকজন কে হত্যার হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা খামারে আসার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার করে। তখন এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়ে। পরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এরপর লোকজনের ধাওয়া খেয়ে সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের ভেতর ঢুকে পড়ে।
ইউপি চেয়ারম্যান আরো জানান, সোমবার সকালে সন্ত্রাসীরা পুনরায় গ্রীণ ওয়াল্ড এগ্রো খামারে এসে কর্মচারীদেরকে মারধর শুরু করে। বিষয়টি মসজিদের মাইকে প্রচারের পর এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা গুলি বর্ষণ করে। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজনও লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে গুলি চালায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তাদের ব্যবহৃত ৩টি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন আগুন দিয়ে মোটরসাইকেল গুলো জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় লোকজন মংশি মারমা (২৮) নামের এক উপজাতীয় সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। মংশি মারমা বান্দরবান সদরের গোয়ালিয়া খোলার রোয়াদর পাড়া এলাকার মংশু মারমার ছেলে।
গ্রীণ ওয়াল্ড এগ্রো খামারের ম্যানেজার মোঃ বোরহান উদ্দিন জানান, একদল পাহাড়ি সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের কাছে চাঁদা দাবী করে আসছিল। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে খামারে এসে ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। খামারে সন্ত্রাসীরা আসার বিষয়টি মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে। তখন সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে গুলি করতে করতে চলে যায়। পরে সোমবার সকালে আবারো তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে একদল সন্ত্রাসী খামার এসে চাঁদা দাবী করে। এক পর্যায়ে আমাদের কর্মচারীদেরকে মারধর করতে শুরু করে। এতে মোঃ মুন্না, নুরুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিন নামের ৩ জন কর্মচারী আহত হয়। সন্ত্রাসীরা খামারে এসে হামলা চালানোর বিষয়টি মসজিদের মাইকে প্রচারের পর এলাকার লোকজন এসে ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়ে। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজনও লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ক্ষুব্ধ লোকজন তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল গুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
তিনি আরো জানান, উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা প্রতিদিনই এলাকায় এসে মানুষকে চাঁদা দাবী করে চিঠি দিচ্ছে। তাদের কথা মতো চাঁদা না দিলে রাতে এসে মারধর করছে। প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শিবলী নোমান জানান, উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা পুরানগড়ের বৈতরনী এলাকার একটি খামারে এসে চাঁদা দাবী করছিল। এসময় এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। শুনছি রবিবার রাতে সন্ত্রাসীরা এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। সোমবার সকালেও সন্ত্রাসীরা আসলে লোকজন তাদেরকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ লোকজন মোটরসাইকেল গুলো জ্বালিয়ে দেয়। এসময় এলাকার লোকজন সন্ত্রাসী সন্দেহে একজনকে আটক করে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।