চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, আনোয়ারা ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলের নিখোঁজ ৩ জেলের সন্ধান মেলেনি ৪ দিনেও। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া এসব জেলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কেউ আদরের সন্তানকে হারিয়ে, আবার কেউবা প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে নির্বাক। এসব পরিবারে আজ চারদিন ধরে চলছে আহাজারি। তাদের বুকফাটা কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। শোকার্ত পরিবার গুলোর পাশাপাশি অঝোরে কাঁদছে তাদের প্রতিবেশীরাও। পুরো এলাকা জুড়ে এখন শুধুই কান্নার রোল।
গত বুধবার (৫ আগষ্ট) সকালে বঙ্গোপসাগরের সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডের অদূরে ১২ মাঝি মাল্লা নিয়ে মাছ ধরার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। এসময় নিখোঁজ হয় আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের খুরুস্কুল গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৩৫), একই ইউনিয়নের জুঁইদন্ডী গ্রামের সিপাহী বাড়ির মৃত আবুল হোসেন প্রকাশ বাঁশির ছেলে কফিল উদ্দিন (৩০) এবং অপরজন বাঁশখালী উপজেলার হাটখালী এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে তার নাম এখনো জানা যায়নি।
শনিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ কফিল উদ্দিনের বৃদ্ধ মা জরিমন খাতুনের (৫৮) আহাজারি থামছেনা। কাওকে দেখলেই ছেলে কখন আসবে জিজ্ঞাস করছে। কফিলের ১ছেলে ২মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে মোছাম্মৎ আসমা আক্তার (৫) ফেলফেল চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিখোঁজ জেলে কফিল উদ্দিনের স্ত্রী মোছাম্মৎ কুনছুমা আকতার (২৫) জানান, পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে তার স্বামী একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বোটের মালিক একবার এসে দেড় হাজার টাকা দিয়ে চলে গেছে। আর কেউ কোন খোঁজ খবর নেয়নি এখনো। নিজের কোন বাড়ি ঘর নেই, ভাড়া বাসায় থাকে। ছোট ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধ মা-দাদাকে নিয়ে এখন তারা দিশেহারা। অন্যদিকে নিখোঁজ জেলে রফিকের পরিবারে স্ত্রী ও ২ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। তার পরিবারেরও চলছে শোকের মাতম। জেলেদের উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি না থাকায় ক্ষোভ বেড়েছে স্থানীয় ও নিখোঁজ জেলেদের পরিবারদের মধ্যে।
ফিরে আসা জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার গহিরা গ্রামের ইলিয়াছ ও জুইঁদন্ডী এলাকার আবুল হোসেনের মালিকানাধীন একটি মাছ ধরার ট্রলার ১২ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে গত মঙ্গলবার সকালে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বুধবার সকাল ৮টার দিকে বঙ্গোপসাগরের সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডের অদূরে ট্রলারটি জাল ফেলে নোঙর করে। হঠাৎ সাগরে নিম্ন চাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারের থাকা ১২ জনমাঝি-মাল্লার মধ্যে ৯জনকে পাশর্^বর্তী অন্য ট্রলারের জেলেরা জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও ৩ জনকে উদ্ধার করতে পারেনি।
ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি জহির উদ্দিন বলেন, আমরা সাগরে জাল ফেলে টানার সময় হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই সময় নিখোঁজ ৩ জন ট্রলারের কেবিনের ভেতরে ছিলেন। পরে আমরা সাঁতরে অন্য একটি ট্রলারে উঠলেও তারা ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদেরকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক আবুল হোসেনের সাথে একাধিকবার কথা বলার চেস্টা করলেও তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কারণে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম চৌধুরী খোকা বলেন, নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে নৌ-বাহিনীর সহযোগিতা নেয়া প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো অত্যন্ত গরিব। এসব পরিবারের জন্য মৎস্য অফিস থেকে অর্থ-সহায়তা প্রদান করাও প্রয়োজন।
আনোয়ারা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, এখনো পর্যন্ত এঘটনার বিষয়ে কেউ আমাদেরকে কিছুই বলে নাই। আমি এখুনি খোঁজ নিচ্ছি।
এবিষয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ বলেন, সাগরে ট্রলার ডুবিতে জেলে নিখোঁজের ঘটনায় ট্রলারের মালিক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছে। পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সাথে কথা বলে এসেছে।