Breakingচট্টগ্রাম অঞ্চলসারাদেশ

শুল্কযুক্ত পন্য আসার আগেই কেজিতে ২০ টাকা বাড়লো পেয়াজের দাম

অসাধু সিন্ডিকেটের কবলে পেঁয়াজ

চট্টগ্রাম :
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া মাত্রই কোন সময় নষ্ট না করেই মুনাফাকোর অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ বানিজ্য শুল্ক আরোপিত সেই পেঁয়াজ এখন পর্যন্ত আমদানীই হয়নি বাংলাদেশে। আর হঠাৎ গলাকাটা দাম আদায় শুরু করাতে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পেঁয়াজ বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে একদিনের ব্যবধানে এই পণ্যের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে অন্তত ২০ টাকা। অনেক আড়তে বেশি দামে বিক্রির আশায় ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। শুল্ক যুক্ত দামের পেঁয়াজ এখনো আমদানি না হলেও দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম একদিনের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতা ও সংশ্লিষ্টরা।

 

বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাবে হঠাৎ এমন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যবসায়ীরা চিরাচরিতভাবে সিন্ডিকেটের বিষযটি অস্বীকার করে তাদের ভাষায় “সরবরাহ কম থাকায়” পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে দাবি করছেন। এই যে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা সাধারন জনগনের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন সে ব্যাপারে কিন্তু কেউ কিছু বলছেনা। বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনের জন্য যে মন্ত্রনালয় এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব রয়েছে তারা নির্বিকার। কোন মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীদের অতিলোভী সিন্ডিকেট জিম্মি করে ফেলে সাধারন নাগরিকদেরকে। এসব শক্তিশালী সিন্ডিকেট এতই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যে, তারা সরকারকেও তোয়াক্কা করছেনা। কয়েক মাস আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানীর অনুমতি দেয়ার আগেও পেঁয়াজ নিয়ে এই মুনাফাখোর অতিলোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সাধারন নাগরিকদের জিম্মি করে যেভাবে খুশী দাম নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতদিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক দিতে হতো না বাংলাদেশকে। হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় দেশটি। দেশটির বাজারে পেঁয়াজের দামের নাগাল টানতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানানো হয়।

 

শুল্ক আরোপের খবরে রবিবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকে খাতুনগঞ্জের আড়তে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ টাকা।

 

জানা গেছে, শনিবার চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। রোববার বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার সহ বিভিন্ন খুচরা দোকানে কেজি প্রতি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর এ নিয়ে খুচরা পর্যায়ে ক্রেতা- বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়া বেঁধে যাচ্ছে।

চাকতাই-খাতুনগঞ্জে আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এ কারণে সীমান্তে স্থলবন্দর এলাকায় দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জে। রবিবার সকাল থেকে কেজি প্রতি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের দিন শনিবার ৪০-৪৫ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তিনি আরো বলেন, ভারত ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি দেশ পেঁয়াজ রফতানি করে। ভারতে দাম বেড়েছ, এখন অন্য দেশের মার্কেট খোঁজা প্রয়োজন। বাংলাদেশে আগেও অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হতো। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে।

 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, শুল্ক আরোপের ঘোষণাতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের স্বভাব এমনই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি দামের পণ্য দেশে আসার আগেই দাম বাড়িয়ে দেন তারা। আবার কোনো সময় দাম কমলেও পণ্য এখনো আসেনি বলে দাম কমাতে চান না। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে অতি মুনাফার লোভ, অসাধুতা কমবে না ততদিন পর্যন্ত এই ভোগান্তিও থাকবে।

Related Articles

Back to top button