চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক , লৌহজং ,মুন্সিগঞ্জ :
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মার চরে এ বছর বিপুল পরিমাণে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকেরা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। সর্ষের ক্ষেতগুলোকে দেখলে মনে হয় হলুদের বন। চোখ ফেরানো দায়। কিছু কিছু জমির সরিষা গাছের হলদে ফুল ঝরে দানায় পরিণত হয়েছে। সেখানে আবার হলুদের সর্ষে বন সবুজ বনে রূপ নিয়েছে। দানা বেঁধে রূপ নেওয়া সবুজ রঙের সর্ষে বনের দিকে তাকালে চোখ ও মন দুটোই জড়িয়ে যায়। কৃষকেরা সরিষার এমন আবাদে মহাখুশি। তাঁরা এখন দিন গুনছেন পাকা সরিষা ঘরে তোলার।
দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার সিংহ ভাগই আমদানি নির্ভর। এতে বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানিতে এগিয়ে সয়াবিন ও পাম অয়েল। দেশে উৎপাদিত তেলের মধ্যে শীর্ষে সরিষা। এছাড়া সয়াবিন, সূর্যমুখী সহ দু-একটি অপ্রচলিত তেলবীজের চাষ হয় সামান্য। বোরো, আমন চাষের মাঝের সময়ে বড় অংশ জমি পতিত থাকে।
এ পতিত জমি ব্যবহার সহ দেশে তেলবীজের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা অর্ধেকে আনতে তিন বছর মেয়াদি রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে সরকার।
রোডম্যাপ বাস্তবায়নে এরই মধ্যে উপজেলায় ফসলের সঙ্গে সরিষার আবাদ ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। তার সুফলও মিলেছে । এ বছর সারাদেশে ব্যাপকভাবে বেড়েছে সরিষার চাষাবাদ।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে উপর্যুপরি কয়েক বছর ধরে আলু চাষ করে লোকসান দিচ্ছে স্থানীয় কৃষক। চলতি বছর ৩৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৪ হাজার কৃষককে দেওয়া হয়েছে প্রণোদনা।
কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর বেশি অর্থাৎ মোট ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কলমার ৩০০ হেক্টর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলেই সরিষার আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৪ হাজার সরিষাচাষিকে প্রণোদনা হিসেবে ১ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি ডিএপি সার দেওয়া হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল বারি ১৪ ও বারি ১৭ এবং বিনা ৪ ও বিনা ৯ জাতের সরিষা আবাদ করে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। ফলন বাড়াতে মাঠ সহকারীরা তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে ভালো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, লৌহজং উপজেলার কৃষকেরা মূলত আলুর আবাদ করে থাকেন। কিন্তু আলুর চাহিদা ও দাম দিন দিন কমে যাওয়ায় এবং বিপরীতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্রমাগত কয়েক বছর ধরে তাঁরা লোকসান গুনছেন। বিষয়টি অনুধাবন করে আমরা কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
সরিষাতে খরচ কম লাভ বেশি। উৎপাদনের ৮০ দিনের মাথায় খেত থেকে ঘরে সরিষা তোলা যায়। প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে কৃষকদের ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি জমিতে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। ৪ হাজার টাকা মণ হিসেবে খরচ বাদে কৃষকদের প্রতি বিঘায় ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হবে।
তিনি আরও জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে আবাদ হয়েছে ৪৫০ হেক্টর অর্থাৎ আগের চেয়ে তিন গুণ। লৌহজংয়ের পদ্মার চরে ৩শ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪৫০ মেট্রিক টন সরিষার উৎপাদন হবে এবং তা থেকে ১৫০ মেট্রিক টন খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যাবে। এর বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।