রামগড়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ঠিকাদারের ভুলের খেসারতে হাত কাটা পড়ল শ্রমিকের
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, রামগড় , খাগড়াছড়ি : অন্যের ঘরে আলো জ্বালাতে গিয়ে অন্ধকারে এখন নিজেদের ঘর। মাত্র ৫শত টাকার দিন মুজুরী দিতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শট থেকে জ্বলে গেছে প্রায় পুরা শরীর। ঘটনাটি ঘটেছে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়ার মাহবুব নগর কর্ণেল বাগান এলাকায়।
গেল ২৫ জুলাই বিদ্যুৎ লাইনে সংযোগ দিতে গিয়ে রামগড় বিদ্যুৎ অফিস ও ঠিকাদারের ভুলে আহত হন ৪ নির্মাণ শ্রমিক । এরমধ্যে আনোয়ার হোসেন (১৮) এর একটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। পুড়ে গেছে পুরো শরীর। একটি পায়ের অবস্থাও গুরুত্বর।
আহত আনোয়ার রামগড় উপজেলার ২নং পাতাছড়া ইউনিয়নের মাহবুব নগর গ্রামের বাসিন্ধা আবদুর রউফ এর ছেলে। সে বর্তমানে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই সোমবার দুপুর ১টার সময় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের কলাবাড়ী এলাকার কর্ণেল বাগানের নতুন নির্মিত ১১ কেবির বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দিতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শাহআলম, তারেক ও ইব্রাহিম সহ তারা ৪ জন নির্মান শ্রমিক আহত হয়। এর মধ্যে আরো এক শ্রমিক মো: ইব্রাহিম খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে তার অবস্থাও গুরুত্বর। আহতদের বাড়ি রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের মাহবুব নগর।
জানা গেছে, রামগড় বিদ্যুতের আবাসীক প্রকৌশলীর মৌখিক নির্দেশে রামগড় পাতাছড়ার ব্যক্তি মালিকানাধীন কর্ণেল বাগান ও পাশ্ববর্তী একটি বাগানে ১১ কেভির ফোর পট্টির নতুন লাইন সংযোগ দিতে গেলে ৪ জন নির্মাণ শ্রমিক আহত হয়। ঠিকাদার নতুন লাইন নির্মাণ শেষে বিদ্যুৎ বিভাগকে বুঝিয়ে দিলে বিদ্যুৎ বিভাগ নিজস্ব লাইনম্যান দিয়ে নতুন লাইন সংযোগ দেয়ার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার নিজস্ব শ্রমিকদিয়ে সংযোগ দিয়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নতুন লাইটি নির্মানে চট্টগ্রামের আনিছ কোম্পানী নামে এক ঠিকাদারকে নিয়োগ দিলে ঠিকাদার জালিয়াপাড়া বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণকারী ওসমান নামে এক সাব-ঠিকাদার কে দায়ীত্ব দেন ।
শ্রমিক মাঝি শাহ আলম জানান, লাইনম্যানদের সাথে যোগাযোগ করেই সাটডাউন দিয়ে কাজের শেষ দিকে পিডিবির লাইনম্যান ইউসুফ ভুল করে লাইন চালু করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে তিনি আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ব্যয়ে ঠিকাদার ও বিদ্যুৎ অফিস থেকে টাকা তুলে আহত আনোয়ারের চিকিৎসায় ব্যয় নির্বাহ করার কথা জানালেও মূলত আহতদের পরিবার কোট টাকা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
পিডিবির লাইনম্যান ইউসুফ জানান, একঘন্টা পরপর আমাদের আাদের পিডার পরিবর্তন করে লাইন চালু করতে হয়। ওখানে অপর লাইনম্যান সালাউদ্দিন ছিলেন তিনি আমাকে জানাননি যে ওই লাইনে কাজ চলছে।
আহত আনোয়ারের পিতা আবদুর রউফ বলেন, বিদ্যুৎ অফিস ও ঠিকাদারের অবহেলায় আমার ছেলের জীবন সংকটাপন্ন। গত ৯ আগষ্ট ডাক্তাররা ছেলের এক হাত কেটে ফেলেছে এবং একটি পায়ের অবস্থাও খারাপ সেটাও কাটা পড়তে পারে। বেঁচে থাকলেও ছেলেকে পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমি কৃষক ইতিমধ্যে ঋণ নিয়ে ২ লাখ টাকা খরচ করে ঢাকা চিকিৎসা করাচ্ছি আগামীতে কি করে চিকিৎসার ব্যয়ভার চালাবো কিছুই জানা নেই।
আহতের মা পেয়ারা বেগম বলেন, তাদের ভুলে আমার ছেলে মরে যাচ্ছে। চিকিৎসা খরচতো দিচ্ছেই না অন্তত একটিবার দেখেও যায়নি কেউ। ছেলের কষ্ট আর সহ্য হয়না।
সাব-ঠিকাদার ওসমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করেই সংযোগ দেয়া হচ্ছিলো অসাবধানতাই দুর্ঘটনার কারণ। তবে আহতদের চিকিৎসা খরচ তিনি দিয়েছেন বলে জানান।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার ওসমান জানান, আহত আনোয়ারের জীবন সংকটাপন্ন। চিকিৎসা ব্যয় লাগবে প্রায় ১০ লাখ সেখানে বিদ্যুৎ অফিস ও ঠিকাদারের লাখ টাকা কিছুইনা। তিনি এলাকা থেকে টাকা তুলে সহযোগীতা করছেন বলে জানান।
রামগড়ের আবাসিক প্রকৌশলী (উ.স.প্র.) আজগর আলী জানান, ঠিকাদারের কাজের সুবিধার্থে নতুন লাইন শাট ডাউন দিতে গিয়ে ভূল বুঝাবুঝিতে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তখন আমি রামগড় পিডিবিতে নতুন আসি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই এ দুর্ঘটনা। তবে আহতদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।