মোখা’র আগাম সংকেতে পানছড়ির চেঙ্গী নদীতে চলছে মাছ ধরার উৎসব
স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি :
বৈশাখের শেষ সময়েও বৃষ্টি না হওয়ার পুকুর নদি খালের পানি কমে যাওয়ায় পানছড়ির চেঙ্গী নদীতে রাবার ড্যামের পানি আটকিয়ে রাখা হয়েছিলো। এতে সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ চলে। আবহওয়া পুর্বাবাসে ১৪ মে ঘুর্ণিঝড় মোখা’র কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশের কিছু অংশ। তাই সর্তকতার জন্য রাবার ড্যামের আটকানো জমা পানি শনিবার ভোরে ছেড়ে দেওয়া হয়েয়ছে। পানি কমে যাওয়ায় চলছে মাছ ধরার উৎসব।
১৩ মে ২০২৩ শনিবার হাজারো মানুষ নেসে পড়ে মাছ ধরতে। কেউ ডুবিয়ে হাত দিয়ে, আবার কেউ জাল সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এসব মাছ ধরছে বিভিন্ন বয়সী মাছ শিকারী যুবক-যুবতী -বয়োজ্যেষ্ঠরা। টেংরা, গুইল্যা, টাকি, তেলাপিয়া, মাগুর, বোয়াল, রুই,কারপু, নলা, মলা পুটি সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতে পেরে খুশি এলাকার এসব মাছ শিকারীরা।
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে অসংখ্য পাহাড়ী ছড়ার ছড়াছড়ি। এছাড়াও পাহাড়ের নিচে বাঁধ দিয়েও মাছ চাষ হয়। অসংখ্য পুকুর থাকলেও আছে প্রকৃতির দান অসংখ্য পাহাড়ী ছড়া। এসব ছড়ার রয়েছে ইছা,মলা, পুটি, গুইল্যা, টেংরা, শিং মাগুর, কাকড়া ও কুইচ্যা।এসব প্রাকৃতিক পাহাড়ি ছড়ার মিঠা পানি প্রবাহিত হওয়ায় মাছের প্রজনন ভাল হয়। যার কারণে রাবার ড্যাম বাঁধ দিলেই চেঙ্গী নদীর পানি ছড়া মুখে প্রচুর মাছ প্রজনন করে বেড়ে যায়।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রবীন ব্যক্তিত্ব বকুল চন্দ্র চাকমা বলেন, সারা বছরই পাহাড়ী চেঙ্গী নদীতে তেমন পানি থাকে না। বর্ষার সময় কাপ্তাই বাধেঁর পানি উপরে আসে, তখন বড় মাছের সাথে ছোট পোনা মাছ উজানে চলে আসে। বর্ষা শেষে নদীতে হাটু পানি থাকেনা, নদীতে মাছও তেমন একটা থাকেনা। শীতকালে পানছড়ি রাবার ড্যাম ফুলিয়ে দিলে তখন নদীর পানি জমে ভরে যায় তখন ছোট মাছগুলো ৩-৪ মাসে আটকানো পানিতে বেশ বড় হয়।
হাবিবুর রহমান , জাল্যা চাকমা, হিরলাল চাকমা, প্রদিপ ত্রিপুরা সহ অনেকেই জানান, প্রতি বছর বৃষ্টির শুরুতে রাবার ড্যামের জমানো পানি ছেড়ে দিলে আমরা মাছ ধরা উৎসবে মেতে উঠি। এ বছর বৃষ্টি না থাকায় এতদিন পানি আটকানো ছিলো। গত কয়েক দিন বৃষ্টি ও মোখা ঘুর্ণিঝড়ের আবাসে আজ পানি ছেড়ে দিয়েছে তাই সবাই মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছি। আমাদের সুতকর্মা পাড়া, মোল্লাপাড়া,শান্তিপুর,চৌধুরী পাড়া,তালুকদার পারা, পোড়াবাড়ি, ফাতেমা নগর, জিয়া নগর,দমদম সহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েক শত মানুষ আমরা মাছ ধরেছি। পুটি,মলা,শোল, টাকি, কারপো,টেংরা, বোয়াল,রুই সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরেছি। আগামী কাল থেকে আর তেমন মাছ পাওয়া যাবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা উপজাতীয় সম্প্রদায়ের তক্কা চাকমা জানায়,পানি কমে যাওয়ায় মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে কই,শিং, মাগুর, বাইন, মলা পুটি,শামুক,কাকড়া,ব্যাঙ কুইচ্যা সহ অনেক ধরনের মাছ ধরেছি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয় কান্তি চাকমা বলেন, পাহাড়ী ছড়ার পানি মিষ্টি। তাই এই এলাকায় মাছ পাওয়া যায়। রুই, মৃগেল কাতলা, তেলা পিয়া, সরপুটি সহ সব প্রজাতির মাছ এখন পানছড়ির বিভিন্ন পুকুরে চাষ হয়। চেঙ্গী নদীর ছড়া উপছড়ায় পুটি, টেংরা, পাবদা, কই, মাগুর, শোল, টাকি, কাকড়া,বাইম,কুইচ্যা, শামুক সহ পাওয়া যায়। তবে পাহাড়ি নদী হওয়ার সারা বছর পানি থাকে না। শুধু রাবার ড্যাম বাঁধের ফলে ৩/৪ মাস আটকানো পানিতে প্রচুর মাছ জন্মে। পানি ছেড়ে দিলে দু‘ একদিন মাছ ধরার আনন্দে সবাই অপেক্ষায় থাকে। তবে কৃষি জমিতে সার ও কীটনাশক বিষ প্রয়োগ, পানি কম হওয়া সহ নানা কারণে মাছের পরিমাণ কমে গেছে। মাছের প্রজনন বৃদ্ধিসহ মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম নির্মাণ জরুরী। পাশাপাশি স্থানীয় জনগনের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাছ রক্ষা করা হবে।