মাইজভান্ডার ওরশ ঘিরে জমে উঠেছে মুলার বাজার
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম :
ফটিকছড়িতে হালদা নদীর চরের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চাষ হয়েছে বড় বড় জাপানি মুলার। বিশাল আকৃতির এ মুলা দেখতে যেমন চমৎকার তেমনি খেতেও অন্যরকম স্বাদ। এবার ফটিকছড়ি বারৈয়ার হাটের পশ্চিম পাশে হালদা নদীর চরে হাজার মুলা চাষ করে সফল হয়েছেন চাষি আব্দুর রহিম।
তার দাবি দেশের সবচেয়ে বড় মুলা উৎপাদিত হয় ফটিকছড়িতে। ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার দরবার শরীফের ওরশ উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় বিক্রি হচ্ছে এসব মুলা।একেকটি মুলার ওজন ৪- ১৫ কেজি। আকার ভেদে এসব মুলার দাম ৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
চাষি আব্দুর রহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ১৫ বছর ধরে মাইজভান্ডারের ১০ ই মাঘের ওরশ উপলক্ষে তারা মুলা চাষ করে আসছে। তবে এবার সে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে প্রায় চার হাজার পিস মুলা রোপণ করেছে। এ জন্য তার এক লাখ টাকা মত খরচ হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে ফলন ও হয়েছে ভালো। এবার তার লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ টাকার ও বেশি। ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকেই বিক্রি করে দিয়েছেন দেড় লাখ টাকার মুলা । তবে মুলা চাষিরা আক্ষেপ করে বলেন, এত বড় একটা মুলা চাষ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের ওরশে বিশাল আকৃতির যে মুলা বিক্রি হয় তার বেশিরভাগ ফটিকছড়ির সুয়াবিল এলাকার মুলা। এবার ওরশে ২০ লাখ টাকার মুলা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এ এলাকার কৃষকদের। এছাড়া এবার মেলায় সবচেয়ে বড় মুলা বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৬ কেজি ওজনের।
১০ মাঘের ওরশ শরীফের অন্যতম আকর্ষণ মুলা। এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত বড় আকারের মুলা মেলায় বিক্রি করার জন্য নিয়ে যায় কৃষকরা। এ বছর নাজিরহাট ঝংকার মোড় থেকে শুরু করে মাইজ ভান্ডার শরীফ মেলা পর্যন্ত মুলা বিক্রি চোখে পড়ার মতো।এক একটি মুলা দুই তিন হাত পর্যন্ত লম্বা ও পাঁচ থেকে ১৬ কেজি ওজনের পর্যন্ত হয়।
কাঞ্চন নগর ইউনিয়নের মুলা চাষি মোতালেব হোসেন জানান, ছয় কানি জমিতে মুলা চাষ করেছি। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ মুলা সাত থেকে ৮শ’ টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে।তিনি জানান, ছয় কানি মুলা চাষ থেকে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা বিক্রি হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, জাপানি হাইব্রীড জাতের এ মূলা পাহাড়ি ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং ফলনও হয় ভালো। উপজেলার প্রায় এক হাজার কৃষক মোট ৯৫ হেক্টর জমিতে এবার মুলা চাষ করেছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে ১৭ মেট্রিক টন মুলা উৎপাদন হয়েছে। যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার অধিক। এবারো লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিবিদ মো. গোলাম আজম জানান, মুলার ক্যারোটিনয়েডস চোখের দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখে এবং ওরাল, পাকস্থলী, বৃহদন্ত, কিডনি ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। মুলার ফাইটোস্টেরলস হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। জন্ডিস আক্রান্ত হলে মুলা রক্তের বিলিরুবিন কমিয়ে তাকে একটি গ্রহণ যোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসে, যা কি না জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। মুলা মানুষের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে এবং কম ক্যালরি যুক্ত সবজি হওয়ায় দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।