প্রাণী বিনিময়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সংযোজিত হলো জলহস্তী
চট্টগ্রাম :
প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সংযোজিত হলো জলহস্তী। প্রাণী বিনিময়ের আওতায় রংপুর চিড়িয়াখানায় এক জোড়া বাঘ পাঠিয়ে তার পরিবর্তে ঢাকা থেকে একটি জলহস্তী পেয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রথম ধাপে একটি পুরুষ জলহস্তী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পৌঁছেছে। এটির বয়স ১২ বছর। দ্বিতীয় ধাপে সপ্তাহখানেক পর আরও একটি জলহস্তী এ চিড়িয়াখানায় আসবে।
এর আগে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে প্রাণী বিনিময়ের আওতায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে এক জোড়া বাঘ রংপুর চিড়িয়াখানায় এবং এর বিনিময়ে এক জোড়া জলহস্তী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দেওয়ার জন্য মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব অনুমতি দেন। এরপর মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয় রোমিও-জুলিয়েট নামে এক জোড়া বাঘ। লাল কাপড়ে মোড়ানো লোহার দুটি খাঁচায় করে বাঘ দুটি নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কুমিরের আগের জায়গায় নতুন করে তৈরি করা হয়েছে নতুন অতিথি জলহস্তীর বাসস্থান। আর কুমিরের খাঁচা তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ের পশ্চিম পাশে লেকের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে। জলহস্তী স্তন্যপায়ী তৃণভোজী প্রাণী। একটি প্রাপ্তবয়স্ক জলহস্তীর ওজন গড়ে ১ হাজার ৫০০ কেজি হয়ে থাকে। এ প্রাণীর খাবার ঘাস-পাতা ও বিভিন্ন ধরনের ফলমূল। জীবনকাল ৩০ থেকে ৪০ বছর।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাৎ শুভ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে দুই বছর বয়সী এক জোড়া বাঘ ১৯ সেপ্টেম্বর রংপুর চিড়িয়াখানায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এক জোড়া জলহস্তী থেকে প্রথম ধাপে একটি পুরুষ জলহস্তী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পৌঁছেছে। যার বয়স ১২ বছর। ৫-৭ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে আরেকটি জলহস্তী চিড়িয়াখানায় আসবে।
জানা গেছে, ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। সেজন্য রংপুরকে বাঘ দিলেও মন্ত্রণালয় ঢাকা থেকে আমাদের জন্য জলহস্তীর ব্যবস্থা করে। ২০২১ সালের শেষদিকে মন্ত্রণালয়ের কাছে জলহস্তী চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রহমান। এ প্রক্রিয়া অগ্রসর না হওয়ায় ২০২২ সালের ২২ আগস্ট আবারও চিঠি দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় বিনিময় হিসেবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে রংপুরের জন্য এক জোড়া বাঘ এবং ঢাকার জন্য এক জোড়া সাম্বার হরিণ ও এক জোড়া ইন্দোনেশিয়ান আয়াম সিয়ামি মোরগ দেয়ার প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি রংপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ পাঠানো এবং জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে জলহস্তী চট্টগ্রামে আনার যাবতীয় ব্যয়ভার চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কাছে বহন করার শর্ত দেওয়া হয়। গত ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ রংপুরে বাঘ পাঠানো এবং ঢাকা থেকে জলহস্তী আনার ব্যয়ভার বহন করার শর্ত মেনে নিয়ে চিঠি দেয়। অন্য প্রাণীগুলো চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত না থাকায় সেগুলো প্রজনন সাপেক্ষে পরবর্তী দেয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জলহস্তী দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায় মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য ,১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৬ একর পাহাড়ি জমির ওপর গড়ে তোলা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি জলহস্তী সহ এখন পর্যন্ত মোট ৬৯ প্রজাতির ৬ শতাধিক পশু-পাখি রয়েছে। এরমধ্যে আছে বাঘ, সিংহ, বানর, হরিণ, গয়াল, জেব্রা, কুমির, বানর, উল্লুক, ভালুক, শকুন, উঠপাখি, মেছোবাঘ, অজগর, টার্কিসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। চলতি বছর ১৬ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয় এক জোড়া সিংহ। একই সময় আনা হয় চার জোড়া ওয়াইল্ড বিস্ট। বর্তমানে এ চিড়িয়াখানার জমির পরিমাণ ১০ দশমিক ২ একর।