পুলিশ সদস্যদের ১১ দফা দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
“পুলিশের সংস্কার,পুলিশ হবে জনতার” এই স্লোগানে পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের ১১দফা দাবিতে ও সারাদেশে নিরীহ পুলিশদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার(০৮আগস্ট) বিকালে খাগড়াছড়ির পুলিশ লাইন্সে এ বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এতে অংশ নেন শত শত পুলিশ সদস্যরা।
এ সময় পুলিশ সদস্যরা জানান,পুলিশ বাংলাদেশের জানমালের রক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করে আসছে। বাংলাদেশের কোন পুলিশ সবসময় দেশের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। সরকার পরিবর্তন হবে। পুলিশকে রাজনীতির বাহিরে রাখতে হবে,স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নবতে হবে। কোন ধরনের রাজনীতিতে পুলিশকে না জড়ানোর জন্য জোরালো দাবি জানান তারা। সেই সাথে সারাদেশে হাজার হাজার নিরীহ পুলিশ সদস্যদের হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি এবং দ্রুত নির্বিচারে পুলিশের উপর নির্যাতন,হত্যা ও গুম বন্ধের দাবি জানান তারা।
এছাড়াও পুলিশের ১১দফা দাবি না মানলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয় এবং ১১ দফার দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কারের দাবি সমূহ -২০২৪:
০১/ স্বাধীন কমিশন গঠন, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাব মুক্ত জনগনের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। পুলিশের আমরা যে রংয়ের ইউনিফর্ম পরিধান করে কলংকিত হলাম সেই পোষাকের রং পরিবর্তন করে কনস্টবল থেকে আই জি পর্যন্ত একই ড্রেসকোড হতে হবে।আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এর সাথে সাথে যে সকল সিনিয়ার অফিসাররা ক্ষমতা লোভি দালাল পুলিশ অফিসারদের কারণে আমাদের শত শত
পুলিশ সদস্য ও সাধারণ ছাত্র জনতা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদেরকে গ্রেফতার করে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে ও তাদের অবৈধ সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ ও জনতার কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।
০২। ক) চলমান সহিংসতায় যে সকল পুলিশ সদস্য আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে, যে সকল সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানমালের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন এবং যাদের আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকারের বিভাগীয় ব্যবস্থা অথবা হয়রানি করা যাবেনা । সেই সাথে আন্দোলনরত কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে না মর্মে লিখিত অঙ্গিকার করতে হবে ।
খ) সকল পুলিশ সদস্যদের অন্যান্য সংস্থার চাকুরীর মতো শ্রম আইন অনুযায়ী ০৮ (আট) ঘন্টা কর্মঘন্টা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি ০৮ (আট) ঘন্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে ওভার টাইম হিসাবে গন্য করতে হবে।
০৩। ক) নিয়োগ, প্রশিক্ষন ও পদোন্নতিতে বৈষম্য দূর করতে হবে। শুধু মাত্র কনস্টেবল ও এএসপি এই ২ ধাপে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। কনস্টেবল নিয়োগ এর যোগ্যতা কমপক্ষে এইচএসসি পাশ করতে হবে এবং এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ করে নুন্যতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। ইন্সপেক্টর ও তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতির জন্য অবশ্যই গ্রাজুয়েট হতে হবে এবং নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় স্টাফ কলেজের মাধ্যমে ডিগ্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
খ) অধস্থন পুলিশ সদস্যদের টিএ/ডিএ বিল যথা সময়ে প্রদান করতে হবে ও সোর্সমানি প্রদান করতে হবে।
০৪। ঝুঁকি ভাতা বেসিক এর ৭০% দিতে হবে এবং সকল ইউনিটে শতভাগ মাসিক ফ্রেশমানি নিশ্চিত করে পুলিশ সদস্যদের ব্যাংক একাউন্টে দিতে হবে।আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও পরিবারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার পাশা পাশি ব্যক্তিগত চিকিৎসা করা হলে তাহার ভাউচার অনুসারে কল্যাণ তহবিল ও কল্যান ট্রাস্ট থেকে সম্পুর্ণ ক্ষতিপুরণ দিতে হবে।
ক) প্রত্যেক পুলিশ সদস্যরে প্রতি বছর ২০ (বিশ) দিন নৈমিত্তিক ছুটির পাশাপাশি ০২ (দুই) মাস অর্জিত ছুটি বাধ্যতামূলক ভোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
খ) রাজনৈতিক পদোন্নতি বন্ধ করে ইউনিট বৈষম্য দূর পূর্বক কনস্টেবল থেকে সকল পর্যায়ের অফিসারদের পোষ্টিং বাণিজ্য বন্ধ করে সকল ইউনিটে পোষ্টিংয়ের সুযোগ করে দিতে হবে। প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে নিজ রেঞ্জে পর্যায়ক্রমে চাকরীর প্রধান্য দিয়ে অধস্থন পুলিশ সদস্যদের ১০০% আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
০৫। ক) বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে একবার পরিক্ষায় পাশ করার পরে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা এবং অধস্থন দের পদোন্নতির বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে সুপার নিউমারারী পদ সৃজন করতে হবে। একই পদে সর্বোচ্চ ০৬ (ছয়) বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
০৬।খ) ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিগত ১৫ (পনের) বছরে যারা সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে এবং ওসি হিসাবে ০২ (দুই) বারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং৫৪ (চুয়ান্ন) বছরের বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলে দিতে হবে। ইন্সপেক্টর থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ চাকুরি হারালে সকলেই পেনশন সহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা পায় একই সুবিধা কনস্টবল থেকে এসআই পর্যন্ত দিতে হবে এবং সারা বাংলাদেশে যে সকল সদস্যদের বকথায় করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মানবিক কারনে বিবেচনা করতে হবে।
০৭। খ) অধস্থন পুলিশ সদস্যদের সাথে পিআরবি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরন করতে হবে, পুলিশ সুপারের নিচে বডিগার্ড, অর্ডালি নিয়ম বন্ধ করতে হবে এবং ব্যক্তিগত কাজে কোন সদস্যকে ব্যবহার করা যাবেনা।
০৮। জনগনের স্বার্থে এবং সুষ্টু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগের অবৈধ রেকার বানিজ্য বন্ধ করা এবং মামলার টার্গেট প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
০৯। কমিউনিটি ব্যাংক এবং সকল কল্যাণ তহবিলের সু-স্পষ্ট হিসাব প্রতিবছর সকলকে প্রদান করতে হবে এবং লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ৬% এর নিচেই নিয়েই আসতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যান ট্রাস্ট থেকে সমন্বয় করতে হবে।
১০। প্রত্যেক ইউনিট হতে সমন্বয় করে নতুন করে পুলিশ এসোসিয়েশন গঠন করতে হবে এবং কনস্টেবলদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা দিতে হবে।
১১। আমাদের দাবী সমূহ ০৭ (সাত) কার্য দিবসের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।
অন্যথায় সময় বাংলাদেশ পুলিশের কর্মবিরতি চলমান থাকবে বলে জানান তারা।