পাহাড়ের শান্তি বিনষ্ট করতে তৎপরতা চালাচ্ছে আঞ্চলিক দল গুলো
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক , রাঙ্গামাটি : আবারো রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আঞ্চলিক দল গুলো। প্রতিনিয়ত অস্ত্রে মহড়া দিয়ে পাহাড়ের শান্তি বিনষ্ট করতে তৎপরতা চালাচ্ছে আঞ্চলিক দল গুলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংগঠন গুলো দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘ বছর ধরে প্রতিনিয়ত অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে।
নানিয়ারচর উপজেলা কার্যালয়ে ঢুকে উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা হত্যার তিন বছরের মাথায় বাঘাইছড়ি উপজেলা কার্যালয়ে ঢুকে ইউপি সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল গুলোর তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলায় তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সংস্কার লারমা গ্রুপ), ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ সংস্কার), মগ লিবারেল ফ্রন্ট (মগপার্টি) তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত অপহরণ, হত্যা ও চাঁদাবাজীর মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। বিশাল অংকের চাঁদাবাজীর কারণে আঞ্চলিক দল গুলোর হাতে চলে আসছে অত্যাধুনিক অস্ত্র।
অত্যাধুনিক অস্ত্রের কারণে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক দল গুলোর মাঝে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা জেএসএস) গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঘাইছড়িতে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ লেগেই রয়েছে। গত ৩ মাসে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২০ বারের ও বেশী গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। দিন রাত সহ গভীর রাতে বাঘাইছড়ির বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক দল গুলো সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। গোলাগুলির ঘটনায় প্রতিনিয়ত কেঁপে উঠছে পুরো বাঘাইছড়ি। আঞ্চলিক দল গুলোর গোলা গুলির ঘটনায় গুলি এসে বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকার বাড়ী ঘরে আঘাত হানে মাঝে মাঝে। এই ঘটনায় সম্প্রতি বাবু পাড়া এলাকায় একজন নিহত হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারী প্রকাশ্য দিবালোকে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গুলির ঘটনায় সমর বিজয় চাকমা নামে একজন নিহত হয়।
দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর অপারেশন উত্তোরনের ফলে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের অস্ত্রধারী গ্রুপ সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ পার্বত্য অঞ্চল ত্যাগ করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল গুলোতে অবস্থান গ্রহণ করে। ভারতে অবস্থানের ফলে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর তৎপরতা কিছু দিন বন্ধ ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি বাঘাইছড়ি ও বরকল সীমান্ত হয়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকটি দল বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তাদের মধ্যে আবারো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে সুত্র জানায়।
এই অবস্থায় পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ী বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিধান করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ও বিজিবি ও বিএসএফ পর্যায়ে বৈঠকে বিজিবির মহা পরিচালক ভারত সীমান্তে পার্বত্য অঞ্চলের সশস্ত্র গ্রুপ গুলোর আস্তানা ধ্বংস করতে বিএসএফকে অনুরোধ জানান। ২০২০ সালের শেষের দিকে এই অনুরোধের পর থেকে আঞ্চলিক দল গুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আবারো বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে দাবী করেন সুত্রটি।
এদিকে পার্বত্য অঞ্চলে অধিকতর রক্তাক্ত জনপদ হিসাবে সাধারণ মানুষ আতংকে ভুগছে বাঘাইছড়ি উপজেলাকে নিয়ে। বাংলাদেশের সব চেয়ে বড়ো উপজেলা হিসাবে খ্যাত এই উপজেলায় প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক দল গুলোর তৎপরতা রয়েছে। বিশাল এই উপজেলার চার পাশে ভারতের অবস্থান হওয়ায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর অস্ত্রধারীরা যে কোন অঘটন ঘটিয়ে সীমান্তের ওপারে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকার কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও কিছুই করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ।
২০১৮ সালের উপজেলা নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় বাঘাইছড়ি উপজেলায় নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মীদের গাড়ী বহরে ব্রাশ ফায়ার করে হামলার ঘটনায় ৮ নিহত ও ২০ জনের বেশী আহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ ২ বছর পার হলেও আজো পর্যন্ত এই মামলার কোন কিনারা করতে পারেনি প্রশাসন। বেশ কয়েকটি তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। নিয়মিত মামলা হলেও অদ্যবধি মামলার কোন নিস্পত্তি ও সুষ্ঠ বিচার না পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।