Breakingখাগড়াছড়িপার্বত্য অঞ্চলসারাদেশ

পাহাড়ি ঢলে ও অতি বৃষ্ঠিতে রামগড়ে কৃষি ফসল ও মৎস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, রামগড় , খাগড়াছড়ি :
খাগড়াছড়ির রামগড়ে ঢলের পানিতে প্লাবিত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মৎস্য খামার ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

 

সরকারি হিসাব মতে শুধু মৎস্য ও কৃষি খাতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি খাতে।

 

রামগড় পৌরসভার ফেনীর কুল, সদুকার্বারী পাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পানি জমে থাকার কারণে আউশ রোপা আমনের বীজতলা ও ধানের চারা গাছ মরে গেছে। জমির পর জমিতে গ্রীষ্ম কালীন বিভিন্ন সবজির জন্য তৈরি করা খেত নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের গাছ ও লতাপাতা সরিয়ে মাঠ আবার প্রস্তুত করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

 

রামগড় পাথর এলাকার কৃষক মো: ইলিয়াছ বলেন, তিনি তাঁর ২০০ শতক জমিতে প্রায় একলাখ টাকা আমনের চারা লাগিয়েছিলেন। পাহাড়ি ঢলে জমে থাকা পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না। তারমত শতশত কৃষকের ফসলি খেত নষ্ট হয়ে আর্থিক লোকশানে পড়েছেন।

 

 

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে উর্ধ্বতন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। পাঠানো প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৫ কৃষি পরিবার। মোট রোপা আউশ ৬৮ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হেক্টর, রোপা আমন ২২৪৬ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৯৬ হেক্টর। শরৎকালীন সবজি মোট ৫৮৫ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫ হেক্টর। টাকার অঙ্কে কৃষিতে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, পৌর সদরের ফেনীরকুল, মহামুনি, দারোগাপাড়া, চৌধুরীপাড়া, সদুকার্বারীপাড়া সহ দুই ইউনিয়নের আংশিক এলাকার কৃষিজমি পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকার কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষকরা রবি মৌসুমসহ সবজির যেন আগাম করতে পারে সে জন্যে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। যদি সরকারি সহযোগিতা আসে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

 

পাহাড়ি ঢলে ও বৃষ্টির পানিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ডুবে মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রামগড়ে মোট ১০৫টি জলাশয় ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৬ হেক্টর পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা।

 

সদুকার্বারীপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী নুর হোসেন জানান, পাহাড়ি ঢলে পানিতে তার প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা ।

 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) প্রনব কুমার সরকার বলেন, তাঁরা মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে একটা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। অধিদপ্তরের দির্শনামতে মৎস্য ক্ষতি পূরণে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতা আফরিন জানান, বন্যার এ ক্ষতি কখনো পোসাবার নয়। কৃষক ক্ষতি কাটায়ে উঠবে এ আশায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান পরিমাপ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। যদি কৃষক প্রনোদণা আসে সেটি সরকার নির্দেশমত কৃষকদের কাছে বিতরণ করবেন।

Related Articles

Back to top button